ছবি: ছবি: সংগৃহীত
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যারা জীবন দিয়েছিলেন, তারা কোনো বিশেষ ভোট পদ্ধতির জন্য নয়, বরং দেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মত্যাগ করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম। তিনি বলেন, আজ গণতন্ত্র হুমকির মুখে, অথচ পিআর (প্রোপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন) পদ্ধতির মতো কৌশলগত বিতর্ক তৈরি করে মূল বিষয় থেকে সরে যাওয়া হচ্ছে।
শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের প্রতি সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। মেজর হাফিজ বলেন, "জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জীবন দিয়েছিলেন, কোনো পদ্ধতির পক্ষে-বিপক্ষে নয়। আজ সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়নি, এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক।"
তিনি আরও বলেন, "যারা এখন ক্ষমতায় আছেন, তারা ক্ষমতার মোহে নীতিবোধ হারিয়ে ফেলেছেন। সহজ পথ হলো নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। একটি গ্রহণযোগ্য ও অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমেই জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। জনগণ তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি চায়, যাকে তারা চেনেন, যিনি তাদের পাশে থাকেন। কেবল একটি মার্কার মাধ্যমে অচেনা কাউকে বেছে নেওয়ার সংস্কৃতি গণতন্ত্রকে দুর্বল করে। পিআর পদ্ধতিতে এমন হতে পারে, ভোলার সংসদ সদস্য হচ্ছেন কুড়িগ্রামের কেউ। এটা জনমানুষের সঙ্গে মশকরা ছাড়া আর কিছু নয়।"
আন্দোলনের শহীদ পরিবারের কথা তুলে ধরে মেজর হাফিজ বলেন, "আজ শহীদদের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, তাদের প্রিয়জনেরা যে স্বপ্ন নিয়ে জীবন দিয়েছেন, সেই স্বপ্ন আজও অধরা। কারণ আজ যারা রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছেন, তারা সেই চেতনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন। বরং তারা সে চেতনাকে অবজ্ঞা করে চলেছেন।"
তিনি বলেন, "বিগত ১৫ বছরে কেউ শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলেননি। উপদেষ্টাদের কেউ নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখেননি। কেবল একজন-দুজন ব্যতিক্রম ছাড়া সবাই নীরব ছিলেন। এদের মধ্যে কেবল ড. আসিফ নজরুল মাঝে মাঝে দুই-একটি কথা বলেন।"
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ প্রসঙ্গে মেজর হাফিজ বলেন, "একদিকে বিএনপি এককভাবে অংশ নিচ্ছে, অন্যদিকে ৩৪টি দল। এখন দেখা যাক, জনসমর্থনে কে কোথায় দাঁড়িয়ে। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, তারা এখন বলছে তারা ভুল করেছে। এসব বলে পার পেয়ে যাওয়া উচিত নয়। আমি মুক্তিযুদ্ধে আহত একজন যোদ্ধা হিসেবে বলতে পারি, এই কথাগুলো শুনতে আমার কষ্ট হয়।"
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রকৌশলী মো. হেলাল উদ্দিন তালুকদার। আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহ-সম্পাদক প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুস সোহবান, অ্যাবের সাবেক মহাসচিব আলমগীর হাসিন আহমেদ, আইইবি সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. সাব্বির মোস্তফা খান এবং আইইবি ঢাকা কেন্দ্রের সদস্য প্রকৌশলী লোকমান প্রমুখ।
আলোচনায় বক্তারা শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে তাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারা বর্তমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
repoter




