ছবি: -সংগৃহীত ছবি
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, জনগণের অংশগ্রহণ ও সমর্থন ছাড়া কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। তার মতে, জনসমর্থন উপেক্ষা করে কোনো কিছু করতে গেলে তা গণতন্ত্রকে ব্যাহত করবে এবং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
সোমবার রাজধানীর উত্তরায় ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি’ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনায় তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেন।
আমীর খসরু বলেন, গণতন্ত্র কেবল কাগজে-কলমে নয়, বাস্তবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া গণতন্ত্র কখনোই টেকসই হয় না। তাই প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে জনগণের আস্থা ও সমর্থনের ভিত্তিতেই কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক ম্যান্ডেট হলো জনগণের রায়, আর এই রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা না দেখালে সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করা হবে।
নাগরিকদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, বিভক্ত সমাজে কখনো গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। জনগণকে বিভক্ত করার যে কোনো প্রচেষ্টা সংবিধানবিরোধী, আর গণতন্ত্রের জন্য তা ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনগণকে সঙ্গে না নেয়, তাহলে তারা টেকসই কোনো প্রক্রিয়া চালাতে পারবে না।
আলোচনা সভায় বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ক্ষমতায়নের দিকেও গুরুত্ব দেন আমীর খসরু। তিনি বলেন, একটি দেশের উন্নয়ন তখনই পূর্ণতা পায় যখন সমাজের প্রত্যেক শ্রেণি-পেশার মানুষ সমান সুযোগ পায়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের সমাজে সম্পৃক্ত করতে হলে আর্থিক, নৈতিক ও মানবিক বিনিয়োগ অত্যন্ত জরুরি। তিনি মনে করেন, এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব সবচেয়ে বেশি। কারণ, সমাজে যাদের অতিরিক্ত সহযোগিতা প্রয়োজন, তাদের জন্য রাষ্ট্রকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
তিনি বলেন, আগামীর বাংলাদেশকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে রূপান্তর করতে হলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। আর এজন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই খাতে বড় ধরনের সংস্কার ও বিনিয়োগ করবে।
সভায় বক্তারা আরও বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবহেলার কারণে তাদের অনেক সম্ভাবনা নষ্ট হচ্ছে। অথচ যথাযথ সুযোগ দিলে তারা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারেন।
আলোচনা শেষে আমীর খসরু আবারও জোর দিয়ে বলেন, গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখতে হলে জনগণের আস্থা ও সমর্থনই মূল শক্তি। জনসমর্থন ছাড়া কোনো কার্যক্রম শুরু হলে তা গণতন্ত্রকে ব্যাহত করবে, যা দেশ ও সমাজের জন্য অশুভ পরিণতি বয়ে আনতে পারে।
এই আলোচনা সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা, সংগঠক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণে কাজ করা সংগঠনের প্রতিনিধি অংশ নেন। তাদের বক্তব্যেও গণতন্ত্রে জনগণের অংশগ্রহণ ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
সর্বশেষ বক্তব্যে আমীর খসরু বলেন, গণতন্ত্রকে সুরক্ষিত করা শুধু রাজনৈতিক দলের দায়িত্ব নয়, এটি নাগরিক সমাজসহ সবার দায়িত্ব। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনগণের আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়, তবে গণতন্ত্র কখনোই কার্যকর হবে না। তাই দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি।
repoter

