ছবি: -সংগৃহীত ছবি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের সামনে থেকে অবৈধ বাসস্ট্যান্ড সরানোর দাবিতে পদযাত্রা করেছেন। রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচি কাঁঠালতলা থেকে শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে প্রধান ফটক হয়ে শাঁখারি বাজার এবং রায়সাহেব বাজার মোড়ে গিয়ে সমবেত হয়। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ শেষে পুনরায় পদযাত্রাটি রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে শেষ হয়।
পদযাত্রায় অংশ নেওয়া শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নানা প্রতিবাদী স্লোগান দেন। তাদের কণ্ঠে শোনা যায়—“ওয়ান টু থ্রি ফোর, বাসস্ট্যান্ড নো মোর”, “সিন্ডিকেটের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও”, “থাকবে না থাকবে না, অবৈধ বাসস্ট্যান্ড থাকবে না”, “প্রশাসনের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন” প্রভৃতি। শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার আশপাশে অবৈধভাবে বাসস্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় চরম ভোগান্তি ও নিরাপত্তাহীনতার শিকার হচ্ছেন তারা।
সমাবেশে জবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক অপু মুন্সী বলেন, “অনেক সময় বোঝা যায় না বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কি বাসস্ট্যান্ড, নাকি বাসস্ট্যান্ডের জন্য নির্ধারিত জায়গা। আমাদের জীবন নিয়ে খেলতে দেওয়া হবে না। যদি ক্যাম্পাসের সামনে আবারও বাসস্ট্যান্ড করার চেষ্টা হয়, তাহলে একটিও বাস আর সুস্থভাবে ফিরতে পারবে না।” তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না।
অধ্যাপক মো. রইছ উদ্দীন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, “এ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র। অথচ এর সামনে অবৈধ বাসস্ট্যান্ড তৈরি করে চাঁদাবাজি ও মাদকের আখড়া গড়ে তোলা হয়েছে। ক’দিন আগে এক ছাত্রী দুই বাসের চাপায় আহত হয়েছেন, এটি বড় দুর্ঘটনায় রূপ নিতে পারত। এর আগে এক পথচারী এখানে প্রাণ হারিয়েছেন, সেই ঘটনা আমরা ভুলিনি।”
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, “পাঁচ আগস্টের পর থেকে শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে প্রশাসনকে পাঁচবার চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কারণ এখানে সবাই সুবিধা নেয়, তাই কেউ এ ব্যাপারে হাত দেয় না। আজ থেকে আমরা স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিচ্ছি, রায়সাহেব বাজার পার হয়ে কোনো বাস ক্যাম্পাস এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে না। যদি প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয় এবং আমাদের ১৭ হাজার শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়, তবে এর দায়ভার নিতে হবে প্রশাসনকেই।”
এর আগে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাকক্ষে এক জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক সমিতি, ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ট্রাফিক লালবাগ বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে দীর্ঘ আলোচনার পর অবৈধ বাসস্ট্যান্ডের বিষয়ে চার দফা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রোববার দুপুর ১২টার পর থেকে কোনো পরিবহন রায়সাহেব বাজার থেকে বাহাদুর শাহ পার্কের দিকে প্রবেশ করতে পারবে না। পরীক্ষামূলকভাবে আগামী এক সপ্তাহ সকল বাস গোয়ালঘাট থেকে ফিরে যাবে। এ সময়ে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীতিমালা প্রস্তুত করবে। প্রয়োজনে এক সপ্তাহ পর পুনরায় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনে করেন, অবৈধ বাসস্ট্যান্ড অপসারণের এ সিদ্ধান্ত কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না হলে আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা রক্ষায় প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বারবার অভিযোগ করেছেন, অবৈধ বাসস্ট্যান্ডের কারণে শুধু ভিড় ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হচ্ছে না, পাশাপাশি এখানে চাঁদাবাজি, মাদকসেবন ও নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার স্বাভাবিক শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম চলতে দেওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন যে, অবৈধ বাসস্ট্যান্ড সরানো না হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী একত্রে আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
রবিবারের পদযাত্রা ও সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা অংশ নেন। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও একত্রিত হয়ে এ কর্মসূচি সফল করেন। অংশগ্রহণকারীরা জানান, অবৈধ বাসস্ট্যান্ড অপসারণের এই আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং পুরো এলাকার মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্যও। কারণ প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই পথে চলাচল করেন এবং বাসস্ট্যান্ডের বিশৃঙ্খলার কারণে তারা প্রতিনিয়ত সমস্যায় পড়েন।
সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এই পদযাত্রা প্রশাসনের ওপর চাপ তৈরি করবে যাতে দ্রুত অবৈধ বাসস্ট্যান্ড অপসারণ করা হয়। একই সঙ্গে তারা আশা করছেন, গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়িত হলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
repoter




