ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিকদের আলোচনায় কূটনৈতিক সমাধানের পথ খুঁজছে বিশ্ব, চলমান উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় সুইজারল্যান্ডের জেনেভা।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে ইউরোপীয় দেশের শীর্ষ কূটনীতিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক চলছে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়। মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা, বিশেষ করে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষাপটে এই আলোচনা বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক মহলে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে।
সংবাদ সংস্থা এএফপি জানায়, এই কূটনৈতিক আলোচনা বিশ্ব নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হয়ে উঠতে পারে। বৈঠকে উপস্থিত রয়েছেন যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ পর্যায়ের কূটনীতিকরা। মূল লক্ষ্য, আলোচনার মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমন এবং সংঘাতের সম্ভাব্য কূটনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করা।
এর আগে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে বক্তব্য প্রদান শেষে সরাসরি বৈঠকের স্থান জেনেভায় পৌঁছান বলে নিশ্চিত করেছে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স। এই সময় তাঁর সফর ঘিরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল বেশ কড়া।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে। ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো চায়, পারস্পরিক সংলাপের মাধ্যমে এই সংঘাতের অবসান হোক এবং বৃহত্তর অঞ্চলে যেন অস্থিতিশীলতা না ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে, আলোচনার বিষয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে বিস্তারিত কিছু জানানো না হলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এটি একাধিক ধাপে গঠিত দীর্ঘমেয়াদি আলোচনার সূচনা হতে পারে। অংশগ্রহণকারী সকল পক্ষই সংকট নিরসনে ‘দায়িত্বশীল ও বাস্তবমুখী’ অবস্থান গ্রহণ করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিশ্ব কূটনৈতিক অঙ্গনে এই বৈঠককে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও জ্বালানি বাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বড় পরিসরে একটি সমঝোতা গড়ে তোলার লক্ষ্যেই এই আলোচনা বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
ইরানের পক্ষ থেকেও শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “ইরান সবসময় কূটনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে বিশ্বাস করে। বর্তমান পরিস্থিতির শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তিই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক স্বার্থ রক্ষা করবে।”
এই আলোচনায় কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নয়, বরং পরমাণু সমঝোতা (জেসিপিওএ) পুনরুজ্জীবনের সম্ভাবনাও আলোচনায় আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও বিষয়টি নিয়ে কোনো পক্ষই আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করেনি।
জেনেভার এই আলোচনা শেষ পর্যন্ত কী ধরনের সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, সেটিই এখন বিশ্ব কূটনৈতিক মহলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। অনিশ্চয়তার মেঘ কাটিয়ে যদি একটি সমঝোতার সূত্রপাত হয়, তবে তা শুধু ইরান ও ইসরায়েলের জন্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্য এক ইতিবাচক বার্তা হয়ে উঠবে।
পরিস্থিতির উত্তাপ কিছুটা প্রশমিত হলেও, দীর্ঘমেয়াদি শান্তি নিশ্চিত করতে এই আলোচনা কতটা কার্যকর হয়, তা নির্ভর করবে অংশগ্রহণকারী পক্ষগুলোর আন্তরিকতা, কৌশলগত অবস্থান এবং বাস্তব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের ওপর।
বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক যেকোনো সংকটের প্রভাব বহুদূরপ্রসারী। এ কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অব্যাহত কূটনৈতিক প্রয়াস ছাড়া স্থায়ী সমাধান প্রায় অসম্ভব। জেনেভার এই বৈঠক হয়তো সেই নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টারই একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
repoter

