ছবি: -সংগৃহীত ছবি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গণতন্ত্র, মৌলিক অধিকার ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। তিনি মনে করেন, জনগণের ভোটাধিকারের সুরক্ষা ছাড়া দেশে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
রবিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় কবিতা পরিষদের আয়োজনে ‘গণতন্ত্র উত্তরণে কবি-সাহিত্যিকদের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন। তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের মানুষ একসময় স্বৈরাচারকে বিদায় করেছে। তাই স্বৈরাচারের পুনর্জাগরণ কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। তিনি এ বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞার কথা ব্যক্ত করে বলেন, রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হতে পারে, তবে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের প্রশ্নে সবার ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে কোনো চরমপন্থা বা মৌলবাদের অভয়ারণ্য যেন তৈরি না হয়, সেটাই বিএনপির প্রত্যাশা। এ জন্য সমাজের প্রতিটি স্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়াতে হবে এবং অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে সবার কণ্ঠস্বরকে জোরালো করতে হবে। তারেক রহমান বলেন, “আমরা চাই না বাংলাদেশে কোনো ধরনের চরমপন্থার উত্থান হোক। সে জন্য সমাজে সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে ধারণ করা জরুরি।”
তারেক রহমান মনে করেন, রাষ্ট্রে প্রকৃত জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করা একান্ত প্রয়োজন। জনগণের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ ছাড়া এবং ভোটাধিকারকে সুরক্ষিত না করলে সেই জবাবদিহি তৈরি সম্ভব নয়। তিনি বলেন, “দেশের মালিক কেবল জনগণ। এই সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হলে মানুষের ভোটাধিকারের প্রশ্নে, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠায় এবং বাকস্বাধীনতার সুরক্ষায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে।”
ভার্চুয়াল বক্তৃতায় তিনি আরও উল্লেখ করেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনই একমাত্র পথ, যার মাধ্যমে দেশের মানুষ তাদের প্রতিনিধি বেছে নিতে পারে। জনগণের ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রের মালিকানা জনগণের কাছেই ফিরে আসবে। তিনি বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে এবং সরকারের জবাবদিহি নিশ্চিত করে।
তারেক রহমান এ সময় কবি-সাহিত্যিকদের প্রতিও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় কবি ও সাহিত্যিকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের লেখনী সমাজে নতুন চেতনা জাগাতে পারে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, কবি-সাহিত্যিকরা গণতন্ত্রের পক্ষে ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সৃজনশীল ভূমিকা রাখবেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে হলে জনগণকেই সামনে আসতে হবে। জনগণের শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি। জনগণের অধিকারকে কেন্দ্র করেই গণতন্ত্র টিকে থাকে। তিনি বলেন, “আমরা যদি সবাই এক হয়ে গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সোচ্চার হই, তবে কোনো শক্তিই গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা রুখতে পারবে না।”
তিনি উল্লেখ করেন, গণতন্ত্র কেবল রাজনৈতিক একটি কাঠামো নয়, বরং এটি একটি সামাজিক চর্চা। এ চর্চা সমাজে যত বিস্তৃত হবে, দেশের উন্নয়ন তত দ্রুত হবে। তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জবাবদিহিমূলক অবস্থান তৈরি হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। এ ছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই।”
তারেক রহমান মনে করেন, রাজনৈতিক মতভেদ থাকা স্বাভাবিক। তবে জাতীয় স্বার্থ ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় এটাই সময়ের দাবি। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক আদর্শ ভিন্ন হলেও গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারের প্রশ্নে আমাদের সবাইকে এক থাকতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ইতিপূর্বে আন্দোলনের মাধ্যমে নিজেদের অধিকার আদায় করেছে। তাই আগামী দিনেও জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে একটি গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
সভায় যুক্ত থাকা অংশগ্রহণকারীরা তার বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সাহিত্য ও সংস্কৃতির ভূমিকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তারেক রহমান বলেন, “গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিটি মানুষকে তার অবস্থান থেকে অবদান রাখতে হবে। এ সংগ্রামে কোনো একক নেতৃত্ব নয়, বরং সমষ্টিগত শক্তিই পরিবর্তন আনবে।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, জনগণকে তাদের সাংবিধানিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন। কিন্তু সেই সমঝোতার মূলে থাকতে হবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তিনি বলেন, “আমরা চাই একটি এমন নির্বাচন, যেখানে জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারবে, যেখানে প্রতিটি নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে।”
তারেক রহমান বিশ্বাস করেন, দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর। নির্বাচন ব্যতীত জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ সম্ভব নয়। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধির জন্য একটি জবাবদিহিমূলক সরকার প্রয়োজন। আর সেটি নিশ্চিত করার একমাত্র পথ হলো সুষ্ঠু নির্বাচন।
শেষে তিনি সবাইকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “গণতন্ত্রের পক্ষে, মানুষের অধিকার রক্ষার পক্ষে, বাকস্বাধীনতার পক্ষে এবং একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এ ঐক্যই বাংলাদেশকে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করবে।”
repoter

