ছবি: -সংগৃহীত ছবি
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে দেড় লাখেরও বেশি পুলিশ সদস্যকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই প্রশিক্ষণকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে পুলিশ সদর দফতর।
শুক্রবার পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) কাজী জিয়া উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনে পুলিশ যেন পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে পারে, সেই লক্ষ্যেই প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে। আর সে লক্ষ্যে পুলিশ বাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুত রাখা হচ্ছে।
ডিআইজি জিয়া উদ্দিন জানান, পুলিশের মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগ গত তিন মাস ধরে নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের সঙ্গে ধারাবাহিক পরামর্শের ভিত্তিতে নয়টি পৃথক প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি করেছে। এসব মডিউলে দায়িত্ব পালনের সময় করণীয় ও বর্জনীয়, জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা, সংঘাত মোকাবিলা, জনতার সঙ্গে আচরণবিধি এবং নির্বাচনী আইন বাস্তবায়ন ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত নির্দেশনা থাকবে।
তিনি আরও বলেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও অতিরিক্ত আইজিপি (এইচআর)-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ কোর্সটি তৈরি করা হয়েছে। এ কারণে বিষয়বস্তু ও কাঠামো উভয় দিক থেকেই এটি অত্যন্ত কার্যকর ও যুগোপযোগী হয়েছে। নির্বাচনকালীন যেকোনো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করার সক্ষমতা পুলিশ সদস্যরা এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জন করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ পুলিশের সারাদেশে মোট ১৩০টি ছোট ও চারটি বড় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের আগে সব সদস্যকে এই কেন্দ্রগুলোতেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি পুলিশ সদর দফতর নির্বাচনী প্রশিক্ষণকে আরও কার্যকর করতে দু’টি প্রামাণ্যচিত্র, একটি ১৫ মিনিটের অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট, একটি ৯ মিনিটের চলচ্চিত্র এবং একটি বুকলেট তৈরি করেছে। এগুলো প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে-কলমে বোঝার প্রক্রিয়াকে সহজ করবে।
ডিআইজি জিয়া উদ্দিন জানান, ইতোমধ্যে নির্বাচনী প্রশিক্ষণের প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। গত ৩১ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার পুলিশ সদর দফতরে ১৫০ জন মাস্টার ট্রেইনারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী ধাপে দেশের ১৯টি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আরও ১,২৯২ জন মাস্টার ট্রেইনার বা ট্রেইনার অব ট্রেইনার্স (টিওটি) তৈরি করার পরিকল্পনা রয়েছে। এরা প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকায় পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি বলেন, প্রশিক্ষণের একটি বড় অংশ বাস্তবমুখী মহড়া বা সিমুলেশন অনুশীলনকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচনের সময় যেসব পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সেসব পরিস্থিতি现场ে অভিনয় করে দেখানো হবে। এর ফলে পুলিশ সদস্যরা শুধু তাত্ত্বিক জ্ঞান নয়, ব্যবহারিক অভিজ্ঞতাও অর্জন করতে পারবেন।
পুলিশ সদর দফতরের এই কর্মকর্তা মনে করেন, এ ধরনের মহড়া পুলিশ সদস্যদের আত্মবিশ্বাস বাড়াবে এবং যে কোনো অঘটন বা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সক্ষম করবে।
তিনি আরও জানান, নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের সময় জনসাধারণের সঙ্গে আচরণ, মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের দিকগুলো বিশেষভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে। প্রশিক্ষণ প্রক্রিয়ায় এসব বিষয়কে আলাদা মডিউল হিসেবে রাখা হয়েছে, যাতে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালনের সময় কোনোভাবেই নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন না করেন।
ডিআইজি জিয়া উদ্দিন আশা প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের আগে দেড় লাখেরও বেশি পুলিশ সদস্য যখন এই প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করবেন, তখন তারা দায়িত্ব পালনে আরও বেশি দক্ষ হয়ে উঠবেন। এতে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করা সহজ হবে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই উদ্যোগ দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
আসন্ন প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে চলতি সপ্তাহের শেষে রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে পুলিশ সদর দফতর। সেখানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন এবং নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুতকৃত প্রশিক্ষণ মডিউলের মূল দিকগুলো উপস্থাপন করা হবে।
পুলিশ সদর দফতরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই কর্মসূচির মাধ্যমে শুধু পুলিশ নয়, গোটা দেশ উপকৃত হবে। কারণ একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনই গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করার প্রধান শর্ত। আর জনগণের আস্থা অর্জন করাই এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
repoter




