ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ইরানে হামলার প্রতিবাদে খেলাফত মজলিসের নেতৃত্বে ঢাকায় বিক্ষোভ—ওআইসির জরুরি বৈঠকের দাবি, জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন
মধ্যপ্রাচ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ইরানে ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট ঘিরে শুক্রবার পবিত্র জুমার নামাজের পর উত্তাল হয়ে ওঠে রাজধানীর রাজপথ। খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেয় বিপুল সংখ্যক মানুষ।
সমাবেশে ইসরায়েলকে ‘অবৈধ রাষ্ট্র’ হিসেবে অভিহিত করে একে শান্তিপ্রিয় মানবতার জন্য একটি ভয়ংকর হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। বক্তারা বলেন, বছরের পর বছর ধরে ফিলিস্তিনে ইসরায়েল যা করে যাচ্ছে, তা নিছক আগ্রাসন নয়—এটি জাতিগত নির্মূল অভিযান। এখন সেই একই আগ্রাসন ইরানের মাটিতে চালিয়ে ইসরায়েল নিজেই বিশ্বশান্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের বলেন, “ইসরায়েল যুগ যুগ ধরে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করে আসছে। এক সপ্তাহ ধরে ইরানে ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে তারা শুধু অবকাঠামো ধ্বংসই করেনি, বরং শত শত নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। এমন বর্বর হামলা সভ্যতার সব সীমা অতিক্রম করেছে।”
তিনি ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা—ওআইসির প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা অবিলম্বে একটি জরুরি বৈঠকের আয়োজন করে এবং ইরানের পাশে দাঁড়িয়ে একজোট হয়ে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। আহমদ আবদুল কাদের বলেন, “যদি মুসলিম বিশ্বের নেতৃত্ব এভাবে নিরব থাকে, তবে একদিন পুরো অঞ্চলকেই আগুনে পুড়িয়ে দেবে ইসরায়েল।”
মার্কিন ভূমিকাকেও কড়া ভাষায় সমালোচনা করে তিনি বলেন, “যারা শক্তির মোহে উন্মত্ত হয়ে পড়ে, তাদের পতন অবধারিত। ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের সহিংসতা পাশ কাটিয়ে বরং ইরানকে হুমকি দিচ্ছেন, যা প্রমাণ করে—মানবতা নয়, বরং রাজনৈতিক সুবিধা তাদের একমাত্র বিবেচ্য।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখার সভাপতি মাওলানা আজিজুল হক। তিনি বলেন, “ইসরায়েল আজ একমাত্র রাষ্ট্র, যা বারবার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। এদের পেছনে শক্তিধর মিত্রদের ছায়া না থাকলে এত সাহস দেখাতে পারত না।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, আবদুল জলিল এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের সভাপতি মাওলানা সাইফুদ্দিন আহমদ খন্দকার। তারা প্রত্যেকেই ইসরায়েলের নৃশংসতার বিরুদ্ধে বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সমাবেশ শেষে বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি তোপখানা রোড হয়ে পল্টন মোড় পর্যন্ত গিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়। ‘আমার ভাই মরল কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’, ‘ইসরায়েল মানে সন্ত্রাস, প্রতিরোধ করো সর্বত্র’ এবং ‘দুনিয়ার মুসলিম, এক হও লড়াই করো’—এমন সব প্রতিবাদী স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।
বিক্ষোভে আরও কয়েকটি ইসলামপন্থী সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করে অংশ নেয়। কেউ কেউ হাতে ফিলিস্তিন ও ইরানের পতাকা নিয়ে স্লোগান দিতে থাকেন, কেউবা প্ল্যাকার্ডে জাতিসংঘ ও ওআইসির নির্লিপ্ত ভূমিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বক্তারা প্রশ্ন তোলেন, “জাতিসংঘ কি শুধু পশ্চিমাদের স্বার্থরক্ষায় সক্রিয়? কেন বারবার নিরীহ মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হলে তারা নীরব থাকে?” তারা মনে করেন, এমন নির্লজ্জ নিরবতায় বিশ্বব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে।
সমাবেশের মাধ্যমে খেলাফত মজলিস একটি স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছে—ইসরায়েলি আগ্রাসন শুধু একটি দেশের বিরুদ্ধে নয়, এটি পুরো মানবতার বিরুদ্ধে ঘোষণা করা যুদ্ধ। আর এ যুদ্ধের বিরুদ্ধে যারা সোচ্চার হবে না, তারা ইতিহাসের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে বাধ্য হবে।
ঢাকায় আয়োজিত এই বিক্ষোভ যেন এক প্রতীকী প্রতিরোধ—যেখানে ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বজনমত গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশ-কাল পেরিয়ে এই বার্তা যেন পৌঁছে যায় সব শান্তিকামী মানুষের কাছে—নিপীড়ন যতই শক্তিশালী হোক, প্রতিরোধ কখনও নিঃশেষ হয় না।
repoter




