ছবি: ছবি: সংগৃহীত
গোয়েন্দাগিরি, বিদেশি রাষ্ট্রের সহায়তা এবং অনুমোদনহীন ইন্টারনেট ব্যবহারের বিরুদ্ধেও রয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান
তেহরান, ১ জুলাই —
ইরানের পার্লামেন্ট মঙ্গলবার একটি নতুন কঠোর আইন পাস করেছে, যেখানে ইসরায়েলের সঙ্গে যেকোনো ধরনের সম্পর্ক বা সহযোগিতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে এবং এর সর্বোচ্চ সাজা হবে মৃত্যুদণ্ড।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য শত্রু রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ, তথ্য আদান-প্রদান বা যেকোনো সহযোগিতা ‘ভ্রষ্টতা’ বা ‘দুর্নীতির’ শামিল। রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে এই ধরনের অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড প্রযোজ্য হবে।
আইনে আরও বলা হয়েছে, কেউ যদি ইসরায়েলকে সামরিক, অর্থনৈতিক বা প্রযুক্তিগতভাবে সাহায্য করে, তাহলে তার বিরুদ্ধেও সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শুধু সরাসরি সহায়তা নয়, ইরানের শত্রুদের স্বার্থে কাজ করা, তথ্য পাচার, এমনকি শত্রু রাষ্ট্রের সঙ্গে পরোক্ষ যোগাযোগও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
এই আইন অনুযায়ী, ইলন মাস্কের স্টারলিংক ইন্টারনেট সিস্টেমসহ যেকোনো ধরনের অননুমোদিত ইন্টারনেট ডিভাইসের বিক্রি, ব্যবহার বা সংরক্ষণকে অপরাধ হিসেবে ধরা হবে। এই অপরাধের জন্য ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেওয়া হতে পারে। তবে কেউ যদি ১০টির বেশি অননুমোদিত ডিভাইস আমদানি বা তৈরি করে, তাহলে তার সাজা হতে পারে ৫ থেকে ১০ বছরের কারাদণ্ড।
নতুন আইনে আরও বলা হয়েছে, কেউ যদি সামরিক ড্রোন তৈরি করে কিংবা সাইবার হামলা চালায় অথবা ইরানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে শত্রুদের পক্ষ থেকে হামলা করে, তাহলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। এমনকি কেউ যদি শুধু এই ধরনের অপরাধ করার চেষ্টা করে, সেটিও মৃত্যুদণ্ডের আওতায় পড়বে।
আইনের আওতায় মিথ্যা তথ্য বা বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট তৈরি করে যদি কেউ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করে, তাহলে তার ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
এ ছাড়া, কেউ যদি বিদেশি মিডিয়ায় ইরানের ছবি বা ভিডিও পাঠায় এবং তা দেশের জনগণের মনোবল বা রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে ২ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হবে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই আইন ইরানের নিরাপত্তা নীতিকে আরও কড়াকড়িভাবে প্রয়োগের পথে একটি বড় পদক্ষেপ। পশ্চিমা বিশ্বের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা, বিশেষ করে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈরিতা, এই আইন প্রণয়নের পেছনে বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই আইন পাস হওয়ার পর দেশটির রাজনৈতিক মহল ও মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটি সরকারের কণ্ঠরোধের নীতিকে আরও তীব্র করবে এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর চরম হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
তবে সরকারপক্ষের মতে, এই আইন জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় অপরিহার্য, কারণ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় দেশের ভেতরে কঠোর আইন প্রয়োগ সময়ের দাবি।
ইরানের এই নতুন আইন মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে, ইসরায়েলের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত এমন আন্তর্জাতিক সংস্থা বা ব্যক্তির ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে।
repoter

