
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
ইসরায়েলের উপকূলীয় শহর আশদোদকে লক্ষ্য করে দুটি রকেট ছোড়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটির সামরিক বাহিনী আইডিএফ। রোববার সকালে হামলার পর আশদোদ ও নিকটবর্তী শহরগুলোতে সতর্কতামূলক সাইরেন বাজতে শুরু করে। ইসরায়েলি সেনাদের দাবি, নিক্ষিপ্ত রকেটগুলোর একটি তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম দ্বারা প্রতিহত করা হয়। অপরটি খোলা জায়গায় আঘাত হানে, তবে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজা থেকে প্রজেক্টাইল হামলার হার কমে আসছে। আইডিএফের চলমান স্থল অভিযানের কারণে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর সক্ষমতা অনেকটাই ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে এ ধরনের রকেট হামলা এখনো ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে আতঙ্ক তৈরি করছে।
এদিকে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি অভিযান ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ২০৮ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৩৪ জনের মরদেহ বিভিন্ন হাসপাতালে আনা হয়েছে। একই সময়ে অন্তত ২০০ জন আহত হয়েছেন।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, চলমান সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে মোট আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৭১ ছাড়িয়েছে। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখনো অনেক মৃতদেহ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে অথবা রাস্তায় পড়ে আছে, যেখানে উদ্ধারকর্মীরা পৌঁছাতে পারছেন না। ধারাবাহিক বিমান হামলা ও অবরোধের কারণে উদ্ধারকাজ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সংকটের আরেকটি চিত্র ফুটে উঠেছে মানবিক সহায়তার চেষ্টা ঘিরে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, গত ২৪ ঘণ্টায় ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে আরও চার জন নিহত এবং অন্তত ১৮ জন আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় সহায়তা নিতে গিয়ে নিহতের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫১৮-এ। একই সময় আহত হয়েছেন প্রায় ১৮ হাজার ৪৪৯ জন।
আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ত্রাণকর্মীরা অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েলের অনুমোদিত সহায়তা বিতরণ ব্যবস্থা কার্যত জীবন ঝুঁকির ফাঁদে পরিণত হয়েছে। অনেক সংস্থা এটিকে "মৃত্যুফাঁদ" বলে অভিহিত করছে। তাদের মতে, যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় মানবিক ত্রাণ কার্যক্রম চালানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে সাধারণ মানুষ মারাত্মক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আশদোদে রকেট হামলার মতো ঘটনা ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর অস্তিত্ব জানান দিলেও, আইডিএফের কঠোর সামরিক অভিযানের ফলে এ ধরনের হামলা টিকিয়ে রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। একই সময়ে গাজায় বেসামরিক প্রাণহানি ও মানবিক বিপর্যয় আন্তর্জাতিক মহলে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন বহুবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। তবে ইসরায়েলের স্থল ও বিমান অভিযান অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতি দিন দিন আরও জটিল হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, যদি শিগগিরই কোনো সমাধান না আসে, তাহলে গাজার মানবিক বিপর্যয় আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজার প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো রকেট হামলা বন্ধ না করলে তাদের সামরিক অভিযানও অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এই অবস্থায় গাজার সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে, যা আন্তর্জাতিক মহলের কূটনৈতিক চাপকে আরও তীব্র করেছে।
সব মিলিয়ে, আশদোদে রকেট হামলার অভিযোগ এবং গাজায় ক্রমবর্ধমান প্রাণহানি এই সংঘাতকে আরও জটিল করে তুলছে। একদিকে সামরিক প্রতিরোধের সীমিত চেষ্টা, অন্যদিকে মানবিক বিপর্যয়ের অন্ধকার—দুই মিলিয়ে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল পরিস্থিতি এখন বিশ্ব রাজনীতির অন্যতম উদ্বেগজনক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
repoter