ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০২:১০ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

ইরানে একের পর এক পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যায় উদ্বেগ, নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ১০

repoter

প্রকাশিত: ০৯:২৯:৫১অপরাহ্ন , ২১ জুন ২০২৫

আপডেট: ০৯:২৯:৫১অপরাহ্ন , ২১ জুন ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

‘অপারেশন নার্নিয়া’র অংশ হিসেবে ইসরায়েলের পরিকল্পিত হামলায় নিহত বিজ্ঞানীদের তালিকায় যুক্ত হলেন ইসার তাবাতাবেই ঘোমশেহ, যিনি স্ত্রীসহ নিজ বাসায় খুন হন বলে জানিয়েছে ইরানি গণমাধ্যম।

ইরানে পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যাকাণ্ড নিয়ে চলমান উদ্বেগ আরও গভীর হলো, যখন ইসরায়েলি অভিযানে আরও এক বিজ্ঞানীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করল দেশটির গণমাধ্যম। এতে করে নিহত পরমাণু বিজ্ঞানীদের সংখ্যা সরকারিভাবে দাঁড়াল ১০ জনে। নিহত সর্বশেষ বিজ্ঞানী হলেন ইসার তাবাতাবেই ঘোমশেহ, যিনি তেহরানের শরীফ ইউনিভার্সিটির সাবেক ছাত্র ছিলেন।

তার মৃত্যুর খবর প্রথম নিশ্চিত করা হয় শরীফ ইউনিভার্সিটির নিউজলেটারে। সেখানে বলা হয়, ঘোমশেহ ও তার স্ত্রী মানসুরেহ হাজিসালেমকে ‘গত সপ্তাহের শেষের দিকে’ নিজ বাড়িতে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সময় বা হামলার ধরন নিয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি, তবে এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলেই মনে করা হচ্ছে।

এ ঘটনায় তেহরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইরান এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেনি, তবে দেশটির একাধিক গোয়েন্দা ও প্রতিরক্ষা সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এই হত্যাকাণ্ড পূর্ব পরিকল্পিত এবং বহিরাগত গোয়েন্দা সংস্থার অংশগ্রহণে সংঘটিত হয়েছে।

এ পর্যন্ত যারা নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার সাবেক প্রধান ফেরেদুন আব্বাসি এবং ইসলামিক আজাদ ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মেহেদী তেহরানচি। এছাড়া শহীদ বেহেশতি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সদস্যরা—আব্দুলহামিদ মিনুচেহর, আহমেদ রেজা জোলফাগারি এবং আমিরহোসেন ফেঘিও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।

নিহতদের তালিকায় আরও রয়েছেন আকবর মোতালেবিজাদে, আলী বাকি করিমি, মনসুর আসগারি এবং সাইদ বোরজি। প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে ইরানের পরমাণু কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাদের হত্যাকাণ্ড একই ধরনের পদ্ধতিতে সংগঠিত হওয়ায়, বিশ্লেষকরা একে একটি পরিকল্পিত এবং সুসংগঠিত অভিযান হিসেবে দেখছেন।

ইসরায়েলের টেলিভিশন চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, এই অভিযানের নাম ‘অপারেশন নার্নিয়া’। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই অভিযানের মাধ্যমে নয়জন ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানীকে একযোগে হত্যা করা হয়েছে, আর এরপর খুব অল্প সময়ের মধ্যে হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে দশম বিজ্ঞানীর।

ইরানি নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই হত্যাকাণ্ডগুলো ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ও গবেষণার গতি কমিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে পরিচালিত। তবে ইরানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই ধরনের হামলা বা হত্যাকাণ্ড দেশটির বৈজ্ঞানিক অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না। বরং এই পরিস্থিতি তাদের আরও দৃঢ় ও আত্মনির্ভর হতে উৎসাহিত করবে।

বিশ্বজুড়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত দাবি করেছে। তারা বলছে, বিজ্ঞানীদের এভাবে লক্ষ্যবস্তু করা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী এবং এটি বৈশ্বিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

ইরান-ইসরায়েল সম্পর্ক ইতোমধ্যে উত্তপ্ত। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই পরোক্ষ সংঘর্ষ ও সাইবার যুদ্ধ চলছে। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত, তবে দেশটি বারবার জানিয়েছে, তাদের গবেষণা শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েল বরাবরই দাবি করে আসছে যে ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে এবং এটি মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠছে। এ প্রেক্ষাপটে, ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সম্পৃক্ততা নিয়ে আলোচনা আরও তীব্র হচ্ছে। যদিও ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে এসব হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেনি।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিজ্ঞানীদের এভাবে হত্যা করে ইরানের পরমাণু প্রকল্পে বিঘ্ন সৃষ্টি করলেও, একইসাথে এটি মধ্যপ্রাচ্যে নতুন ধরনের উত্তেজনার জন্ম দিতে পারে। প্রতিশোধমূলক হামলা কিংবা গোপন অভিযানের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সহিংসতা আরও বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ইরানের পক্ষ থেকে এখনও পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি। তবে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা সব তথ্য বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক ফোরামে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইরানে পরমাণু বিজ্ঞানীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত এ হত্যাকাণ্ডগুলো দেশটির বিজ্ঞানসম্মত অগ্রগতির জন্য বড় একটি ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে এর ফলে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের নিরাপত্তা নিয়েও গভীর শঙ্কা তৈরি হয়েছে। অনেকেই এই হত্যাকাণ্ডগুলোর তদন্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা আশা করছেন।

বর্তমানে ইরানজুড়ে এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। একদিকে শোক, অন্যদিকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ নাগরিকরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠেছে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, কীভাবে এত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে ইরান সরকার কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে এবং ভবিষ্যতে কী পদক্ষেপ নেবে, তা মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা চিত্র ও ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অনেকাংশে প্রভাবিত করতে পারে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, ইরানে পরমাণু বিজ্ঞানীদের টার্গেট করে চালানো হত্যাকাণ্ডের এ ধারাবাহিকতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নতুন করে আলোচনার জন্ম দেবে।

repoter