ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০২:০৭ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

ইরানে আবারও ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন: বন্ধ থাকার পর কয়েক ঘণ্টায় ফের বন্ধ যোগাযোগ

repoter

প্রকাশিত: ০৬:২৯:২১অপরাহ্ন , ২১ জুন ২০২৫

আপডেট: ০৬:২৯:২১অপরাহ্ন , ২১ জুন ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

৬০ ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ইন্টারনেট ফিরে পেলেও আবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন ইরানিরা, পরিবার ও বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগে চরম ভোগান্তি

ইরানে দীর্ঘ সময় ইন্টারনেট বন্ধ থাকার পর গত শনিবার কিছু সময়ের জন্য তা পুনরুদ্ধার হয়েছিল। ইরানিরা যখন ধীরে ধীরে স্বস্তি ফিরিয়ে আনছিলেন, তখনই আবারও বন্ধ হয়ে যায় ইন্টারনেট সংযোগ। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা 'নেটব্লকস' নিশ্চিত করেছে যে, ইরানে আবারও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে।

এর আগে প্রায় ৬০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দেশটির ইন্টারনেট সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিল। এই সময়ে ইরানের জনগণ পরিবার ও আত্মীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে চরম উদ্বেগ ও হতাশায় দিন পার করেছেন। প্রবাসী ইরানিরা তাদের স্বজনদের খবর নিতে পারছিলেন না। অনেকেই জানতেন না, চলমান সংঘর্ষ ও আক্রমণের মধ্যে তাদের আপনজন নিরাপদ আছেন কি না।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকদিনের টানা বিচ্ছিন্নতার পর কিছু অঞ্চলে ধাপে ধাপে ইন্টারনেট সংযোগ চালু হয়। ইন্টারনেট ফিরে পেয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বার্তাপ্রেরণ অ্যাপের মাধ্যমে দ্রুত পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার সেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যা আরও হতাশার সৃষ্টি করে।

এর আগে দেশটির আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিম নিউজ একটি আশাব্যঞ্জক তথ্য দিয়েছিল। তারা দেশটির তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে জানায় যে, “রাত ৮টার মধ্যে দেশের সব প্রান্তে আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট সংযোগ পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করা হবে।” তবে সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবে পরিণত হয়নি বলেই প্রমাণিত হয়েছে।

ইন্টারনেট বন্ধ থাকার পেছনে সরকারিভাবে ‘সাইবার নিরাপত্তা’ হুমকির কথা উল্লেখ করা হলেও, বাস্তব পরিস্থিতি ছিল আরও জটিল। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, প্রতিবাদ এবং আন্তর্জাতিক সংকটের মাঝে ইরান সরকার ফোন ও অনলাইন পরিষেবা একযোগে বন্ধ করে দেয়। ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে দেশজুড়ে যখন উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে, তখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সাধারণ মানুষ জানতে পারেননি তাদের আত্মীয় বা বন্ধুরা নিরাপদে আছেন কি না।

দেশটির অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ ধরনের দীর্ঘমেয়াদি ইন্টারনেট বন্ধ পরিস্থিতি ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, এটি কেবল সাইবার নিরাপত্তার অজুহাতে জনগণকে তথ্য থেকে বঞ্চিত রাখার অপচেষ্টা। ইন্টারনেট ছাড়া জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখন স্থবির হয়ে পড়ে—ব্যাংকিং, চিকিৎসা, জরুরি বার্তা আদান-প্রদান, এমনকি সংবাদ পাওয়ার একমাত্র মাধ্যমও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তথ্যপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই ধরনের ‘ইন্টারনেট শাটডাউন’ কৌশল গ্রহণ করছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। এর ফলে শুধু ইরানের অভ্যন্তরীণ নাগরিকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, বরং বাইরের দেশেও যারা পরিবার বা কাজের সম্পর্ক রেখে চলেন, তারাও এক ধরনের অন্ধকারে পড়ে যাচ্ছেন।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু পোস্ট থেকে জানা গেছে, ইরানের বিভিন্ন শহরের বাসিন্দারা স্থানীয়ভাবে মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ওয়াই-ফাই সংযোগে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন। কেউ কেউ বিকল্প ভিপিএন বা টানেল সেবা ব্যবহার করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা খুব একটা কার্যকর হচ্ছে না।

অনেকেই আশঙ্কা করছেন, সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কারণ রাজনৈতিক চাপ এবং আন্তর্জাতিক উত্তেজনার প্রেক্ষিতে সরকার আরও কঠোর হতে পারে ইন্টারনেট ব্যবস্থাপনায়।

অন্যদিকে, মানবাধিকার সংস্থাগুলো ও প্রযুক্তি স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা বলছেন, এভাবে পুরো জাতিকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার অধিকার কোনো সরকারের নেই। নাগরিকদের যোগাযোগের অধিকার, তথ্য জানার অধিকার এবং মত প্রকাশের অধিকার এসব ইন্টারনেট শাটডাউনের মাধ্যমে খর্ব করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বিশ্ব রাজনীতিতে ইরান এখন অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেশের অভ্যন্তরে বিক্ষোভ, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা, এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সংঘাত—সব মিলিয়ে সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তথ্যপ্রবাহ রুদ্ধ করার পথ বেছে নিচ্ছে। তবে এর দীর্ঘমেয়াদি ফল হতে পারে আরও গভীর জনঅসন্তোষ, আন্তর্জাতিক সমালোচনা এবং দেশটির বৈশ্বিক ভাবমূর্তির অবনতি।

ফলে ইরানিরা এখন শুধুই প্রযুক্তিগত বিচ্ছিন্নতার শিকার নন, তারা যেন এক ধরণের মানসিক অচলাবস্থার মধ্যেও রয়েছেন। তারা জানেন না, তাদের ভবিষ্যৎ কী, পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বা আদৌ কখন তারা আবারও স্বাভাবিক যোগাযোগে ফিরে যেতে পারবেন।

এই অনিশ্চয়তার মধ্যে এখন সবার প্রশ্ন—ইন্টারনেট বন্ধ করে কি সত্যিই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়, না কি এটা কেবলই জনগণের কণ্ঠরোধের আরেকটি কৌশল? 

repoter