ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ইরানের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তেহরান ক্ষতিপূরণ চাইবে এবং সংঘাতের পরে সাময়িক যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে।
ইরানের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাঈদ খতিবজাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দাবির কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলায় সৃষ্ট ক্ষতির জন্য তাদের থেকে ক্ষতিপূরণ নিতে ইরান জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আল মায়াদিন টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান। খবর প্রকাশ করেছে তাসনিম নিউজ।
খতিবজাদে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় আমাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমরা এ ঘটনায় জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাবো এবং তাদের থেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করবো।”
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন শুরু করে এবং প্রায় ১২ দিন ধরে ইরানের সামরিক, পারমাণবিক এবং আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে ব্যাপক হামলা চালায়। এই হামলার ধারাবাহিকতায় ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি ইরানের নাতাঞ্জ, ফোরদো এবং ইসফাহান পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায়।
তবে ইরান এই আগ্রাসনের জবাবে দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ইসলামিক রেভোলিউশন গার্ড কর্পসের এরোস্পেস ফোর্স ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ-৩’ নামে অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েলের দখলকৃত এলাকায় ২২টি পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই হামলায় উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয় ইসরায়েলের দখলকৃত এলাকায়।
এই উত্তেজনার পর ২৪ জুন একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, যা সাময়িকভাবে সংঘাত থামায়। খতিবজাদে জানান, “এই যুদ্ধবিরতি বিষয়ে প্রথম বার্তা পাঠিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।” তিনি আরও বলেন, ইরানি জনগণ তাদের শক্তিশালী প্রতিরোধের মাধ্যমে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে এবং এর মাধ্যমে নিজেদের ইচ্ছাশক্তির জয় নিশ্চিত করেছে।
তেহরান স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, যুদ্ধবিরতি নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে আগ্রাসন অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। খতিবজাদে জোর দিয়ে বলেন, “আমরা ইসরায়েলের সঙ্গে কোনো লিখিত চুক্তি করিনি। এখানে কোনো শর্তযুক্ত সমঝোতা হয়নি। যা ঘটেছে তা হলো—ইসরায়েল তাদের আগ্রাসন বন্ধ করেছে, আর ইরান পাল্টা হামলা চালায়নি।”
এ ঘটনাগুলো মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। ইরানের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দাবির ঘোষণা নতুন রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে যখন দুই দেশই একে অপরকে দোষারোপ করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সংঘাত এবং পরবর্তী ক্ষতিপূরণ দাবি ইরানের জন্য কূটনৈতিক একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হতে পারে, যা আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের অবস্থান শক্ত করার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই ইস্যুতে কতটা গুরুত্ব দেবে এবং এর মাধ্যমে উত্তেজনা কতটুকু কমানো যাবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে নিশ্চিত যে, পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর হামলা এবং ক্ষতিপূরণের দাবিতে এই ইস্যুটি দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক রাজনীতির অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।
repoter

