ছবি: -সংগৃহীত ছবি
ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল মোড়ে বুধবার বিকেল থেকে উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাত্রা করলে পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন এবং এলাকা থমথমে হয়ে ওঠে।
বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে বুয়েট শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। তবে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে পৌঁছালে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড অতিক্রম করার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তেজনাকর রূপ নেয়। এক পর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেল ছোড়ে এবং সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে তাদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। হঠাৎ ধোঁয়া আর শব্দে চারপাশ অস্থির হয়ে পড়ে, আহত হন কয়েকজন আন্দোলনকারী।
আহত অবস্থাতেই বুয়েট শিক্ষার্থীরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বসে পড়েন এবং সেখানেই আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। তারা জানান, হামলাকারীদের বিচার এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখান থেকে সরবেন না। প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাকিবুল ইসলাম লিপু বলেন, এই আন্দোলন আপসের নয়, এটি ন্যায্য অধিকার আদায়ের লড়াই। তিনি জানান, তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
এ সময় ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে মুখর হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের স্লোগান। তারা বারবার আওয়াজ তুলছিলেন, “আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম”, “কোটা না মেধায়, মেধায় মেধায়”, “অবৈধ ডিপ্লোমা কোটা অবসান চাই”, “কোটার নামে অবিচার, বন্ধ করো”, “কোটা প্রথা ভেঙে দাও, মেধাবিদের অধিকার ফিরিয়ে দাও।” তাদের স্লোগানে পুরো এলাকাজুড়ে উত্তাল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
শিক্ষার্থীরা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে কোটা সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাদের অভিযোগ, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের সুযোগ-সুবিধা ও পদোন্নতির নামে প্রকৃত স্নাতক প্রকৌশলীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে। এজন্য তারা তিন দফা দাবি উত্থাপন করেছেন। দাবিগুলো হলো—ডিপ্লোমা প্রকৌশলীরা নামের আগে ‘প্রকৌশলী’ শব্দ ব্যবহার করতে পারবে না, কাউকে পদোন্নতি দিয়ে নবম গ্রেডে উন্নীত করা যাবে না, এবং দশম গ্রেডের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে শুধু স্নাতক প্রকৌশলীদের সুযোগ দিতে হবে।
শিক্ষার্থীরা বলেন, দেশের প্রকৌশল খাতে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে তাদের এই দাবি জরুরি। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে ‘প্রকৌশলী’ ব্যবহার করা হলে পেশার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। আবার নবম গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হলে স্নাতক প্রকৌশলীদের চাকরির বাজার সংকুচিত হয়ে যায়। দশম গ্রেডের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রেও তারা মেধার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতা চান। তাদের মতে, ডিপ্লোমা ও স্নাতক প্রকৌশলীর মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতার যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে, যা চাকরির বাজারে প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন।
পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে পুলিশ এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মোতায়েন রয়েছে। ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়সহ আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাখা হয়েছে। রাস্তায় টহল এবং ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এতে অফিসফেরত মানুষ এবং সাধারণ পথচারীরাও দুর্ভোগে পড়েন।
এদিকে স্থানীয়রা জানান, হঠাৎ সংঘর্ষে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। টিয়ারশেলের ধোঁয়া ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার কারণে আশপাশের দোকানপাট কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুলিশ বারবার আন্দোলনকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়েই অবস্থান নেন।
শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন ক্রমশ বিস্তৃত আকার নিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেকে। তারা জানিয়েছেন, দাবি পূরণ না হলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন। আন্দোলনকারীরা দৃঢ়ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, তাদের এই লড়াই আপসহীন এবং শুধুমাত্র ন্যায্য অধিকারের জন্য।
দিন শেষে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ের পরিবেশ এখনও থমথমে। বুয়েট শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে তাদের কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন, আর পুলিশের কড়া নজরদারির কারণে এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে উদ্বেগ ও উত্তেজনা।
repoter




