
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
ইলন মাস্কের টানেল নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ‘দ্য বোরিং কোম্পানি’ আয়োজিত ‘নট-এ-বোরিং কম্পিটিশন’-এর চূড়ান্ত পর্বে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) দুই শিক্ষার্থী। প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও গবেষকরা টানেল নির্মাণ সম্পর্কিত উদ্ভাবনী ধারণা ও প্রযুক্তি নিয়ে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। আইইউবির অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ আসিফ হাফিজ ও ফাইন্যান্স বিভাগের দেওয়ান মো. আলিফ বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ‘বোর্ড টানেলার্স’ দলের সদস্য। ১৯ সদস্যের এই দলটি আগামী ২৭-২৯ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অনুষ্ঠিতব্য ফাইনালে অংশ নেবে।
প্রতিযোগিতায় দলগুলোকে ৩০ মিটার দীর্ঘ ও ৫০০ সেন্টিমিটার প্রশস্ত টানেল খনন করতে হবে। খননের গতি, নির্ভুলতা ও নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ—এই তিনটি বিভাগে প্রতিযোগীদের মূল্যায়ন করা হবে। প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য হলো নগর পরিকল্পনা, পরিবহন, অবকাঠামো, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ গবেষণা ও খনিজ অনুসন্ধানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে টানেল নির্মাণের খরচ কমানো ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করা।
বোর্ড টানেলার্স ২০২৩ সালে গঠিত হয়। তারা মাইক্রোটানেল বোরিং মেশিন (এমটিবিএম) নামে একটি বিশেষ যন্ত্র তৈরি করেছে, যা রোবোটিক্স, মেকানিকাল, ইলেকট্রিক্যাল, সিভিল ও কম্পিউটার প্রকৌশল ব্যবহার করে কার্যকরভাবে মাটির নিচে সুড়ঙ্গ খনন করতে পারে।
শাহ আসিফ বলেন, ‘গত বছর আমরা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আমাদের পরিকল্পনা উপস্থাপন করি। ইউনিভার্সিটি অফ পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া টেক, ইটিএইচ জুরিখ এবং ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের মতো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছিল। তখনো আমাদের যন্ত্রটি পুরোপুরি তৈরি হয়নি, তাই শুধু আইডিয়া উপস্থাপন করেছিলাম এবং ফাইনালে পৌঁছে রুকি অ্যাওয়ার্ড জিতেছিলাম। এবার আমরা যন্ত্রটিকে আরও উন্নত করেছি এবং প্রতিযোগিতায় সফলভাবে অংশ নিতে আশাবাদী।’
দলের আরেক সদস্য দেওয়ান মো. আলিফ বলেন, ‘এটি শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়; ভবিষ্যতের অবকাঠামো নির্মাণের নতুন পথ উন্মোচনের সুযোগ। আমরা বিশ্বকে দেখাতে চাই, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পিছিয়ে নেই। আইইউবি কর্তৃপক্ষের সহায়তা আমাদের এই যাত্রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’
প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আগে যন্ত্রটিকে বাংলাদেশে পরীক্ষা করা জরুরি। নির্মাণ, পরিবহন ও ভ্রমণ—সব মিলিয়ে এটি বেশ ব্যয়সাপেক্ষ। তবে তারা বাংলাদেশে টানেল নির্মাণ প্রযুক্তিকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে কাজ করছেন।
আইইউবির উপাচার্য অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অনন্য অর্জন। বিশ্বমানের প্রকৌশল প্রযুক্তি উদ্ভাবনে তাদের সক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে। টানেল খনন প্রযুক্তি ভবিষ্যতে অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আইইউবির বিজনেস স্কুলের দুই শিক্ষার্থীর এই সাফল্য প্রমাণ করে, বড় উদ্ভাবন শুধু প্রকৌশল দক্ষতার ওপর নির্ভর করে না; ব্যবসায়িক বিশ্লেষণ ও বহুমুখী জ্ঞানও সমান গুরুত্বপূর্ণ।’
বোর্ড টানেলার্স তাদের প্রযুক্তি উন্নয়নে বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনিক্যাল অ্যাসিসট্যান্স সেন্টার (বিটাক), গ্রামীণফোন, গিগাবাইট অরাস, সুপারস্টার গ্রুপ ও বাংলাদেশ সরকারের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সহায়তা পাচ্ছে। উপদেষ্টা হিসেবে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ হিউস্টনের সালমান প্রোমন, বিটাকের মো. মামুনুর রশিদ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মো. আশরাফুজ্জামান।
প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বোর্ড টানেলার্স ১৮-২২ মার্চ টেক্সাসে অবস্থান করবে এবং ২৩ মার্চ তাদের যন্ত্রটি সেখানে পৌঁছাবে। ২৪-২৬ মার্চ যন্ত্রটির পরীক্ষা ও মূল্যায়ন চলবে। মূল প্রতিযোগিতা ২৭-২৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে এমটিবিএম ব্যবহার করে টানেল খননের দক্ষতা মূল্যায়ন করা হবে। প্রতিযোগিতা শেষে ৩০ মার্চ ক্লিনআপ ও ১ এপ্রিল চূড়ান্ত প্যাকিং সম্পন্ন হবে।
repoter