ছবি: ছবি: সংগৃহীত
চলতি বছর হজ পালনের সময় মক্কা, মদিনা, জেদ্দা ও আরাফায় প্রাণ হারালেন ২৭ জন পুরুষ ও ১১ জন নারী হাজি; দেশে ফিরেছেন অর্ধেকের বেশি হজযাত্রী
চলতি বছর পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গমনকারী বাংলাদেশি হাজিদের মধ্যে ৩৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। হজ পালনের বিভিন্ন পর্যায়ে তারা মক্কা, মদিনা, জেদ্দা ও আরাফার পবিত্র ভূমিতে ইন্তেকাল করেন। রোববার (২২ জুন) প্রকাশিত হজ বিষয়ক সর্বশেষ বুলেটিনে এ তথ্য জানানো হয়।
বুলেটিন সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ২৭ জন পুরুষ এবং ১১ জন নারী হাজি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ২৫ জন মক্কায়, ১১ জন মদিনায়, একজন জেদ্দায় এবং একজন আরাফায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁদের মৃত্যুতে হজযাত্রার এই মহাপবিত্র আয়োজনকে ঘিরে এক শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। যদিও হজ একটি শারীরিক ও মানসিকভাবে কঠিন ইবাদত, তবুও এতজনের মৃত্যুর বিষয়টি দেশবাসীকে গভীরভাবে ভাবিয়ে তুলেছে।
২০২৫ সালের হজ উপলক্ষে বাংলাদেশ থেকে এ বছর সৌদি আরবে গমন করেছেন মোট ৮৫ হাজার ৩০২ জন ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। তাঁদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বিভক্ত হয়ে মুসল্লিরা হজ পালনে অংশগ্রহণ করেন। তবে আবহাওয়া, ভিড়, দীর্ঘ সময় ধরে হাঁটার মতো নানা কষ্টকর বাস্তবতার কারণে অনেকেই স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, যা শেষ পর্যন্ত কারও কারও জন্য মৃত্যুবরণে পরিণত হয়।
হজ বুলেটিনের আইটি হেল্প ডেস্ক সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে ৪২ হাজার ৯৫০ জন হাজি সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। শনিবার (২১ জুন) দিবাগত রাত ৩টা পর্যন্ত এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এ পর্যন্ত মোট ১০৯টি ফ্লাইটে হাজিরা দেশে ফিরেছেন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ফিরে আসা হাজির সংখ্যা ৫ হাজার ৬ জন, আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ফিরেছেন ৩৭ হাজার ৯৪৪ জন।
বাংলাদেশের হজ অফিস, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং বিভিন্ন এয়ারলাইন্স সূত্রে জানা যায়, হজ ফেরত ফ্লাইটগুলো যথাসময়ে পরিচালিত হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। তবে অনেক হাজি এখনো সৌদি আরবে অবস্থান করছেন এবং তাঁদের ফেরত ফ্লাইট ক্রমান্বয়ে পরিচালিত হবে।
হজ পালনকারী মুসল্লিদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরি সহায়তা প্রদানের জন্য সৌদি আরবে বাংলাদেশ হজ মিশনের একাধিক টিম মোতায়েন ছিল। এছাড়া সেখানে ছিল মোবাইল মেডিকেল টিম, তথ্য সহায়তা বুথ এবং জরুরি কল সেন্টার। মৃত্যুবরণকারী হাজিদের জানাজা ও দাফন সংক্রান্ত সকল আনুষ্ঠানিকতা সৌদি আরবের বিধি অনুযায়ী সম্পন্ন করা হয়েছে।
হজে গমনকারী অনেকের মধ্যে ছিলেন প্রবীণ ব্যক্তি, অসুস্থ রোগী এবং নারীরা। তাই তাঁদের জন্য হজের দীর্ঘ যাত্রা, উষ্ণ আবহাওয়া এবং শারীরিক কষ্ট অনেক সময় ভয়াবহ পরিণতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও ইবাদতের তীব্র আকাঙ্ক্ষায় এই পথ বেছে নেওয়া মুসল্লিদের মধ্যে কেউ কেউ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন পবিত্র ভূমিতেই।
বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয় ও হজ অফিস এই মৃত্যুগুলোর সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরেছে এবং পরিবারগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে সহানুভূতিশীল ব্যবস্থাপনা অব্যাহত রেখেছে। নিহতদের পরিবারকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান এবং তাঁদের নাম, পরিচয় ও মৃত্যুপরবর্তী তথ্য রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
হজ যাত্রার এই বিরল অভিজ্ঞতা অনেকের জীবন পরিবর্তন করে দেয়, আবার কারও জন্য তা জীবনের শেষ ধাপ হয়ে ওঠে। পবিত্র ভূমিতে মৃত্যুবরণ ইসলাম ধর্মে সৌভাগ্যের নিদর্শন হিসেবেও বিবেচিত হয়। তবুও, হজ ব্যবস্থাপনার আরও উন্নয়ন, সময়োপযোগী চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং আগেভাগে স্বাস্থ্য যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে।
বাকি হাজিদের নিরাপদে দেশে ফেরানোর জন্য বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট দপ্তর, হজ অফিস এবং বিমান সংস্থাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া চলবে নির্ধারিত সময়সীমা পর্যন্ত। সৌদি আরবের সঙ্গে সমন্বয় করে হজ পরিচালনা কার্যক্রম নির্ধারিত সময়েই শেষ করার প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই বছর হজ পালন শেষে প্রাণ হারানো ৩৮ জন বাংলাদেশি হাজির আত্মার মাগফিরাত কামনা করছেন দেশবাসী। তাঁদের স্মরণে পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ছাড়া, ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের এমন আত্মত্যাগ দেশবাসীর হৃদয়ে গভীর দাগ কেটে গেছে।
এই হজ মৌসুমে বাংলাদেশি হাজিদের সংগঠিতভাবে, নিরাপদভাবে এবং সুষ্ঠুভাবে হজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সরকারের নানা পদক্ষেপের প্রশংসা করা হলেও, মৃত্যুর ঘটনাগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য আরও কার্যকর প্রস্তুতি গ্রহণের উপর জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
repoter




