ছবি: -সংগৃহীত ছবি
নরওয়ের তেল শিল্পকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে গ্রেটা থুনবার্গসহ প্রায় ২০০ পরিবেশ ও অধিকার কর্মী দেশটির বার্গেনে অবস্থিত মংস্টাড তেল শোধনাগার অবরোধ করেছেন। তারা নরওয়ের তেল ও গ্যাস শিল্পের অবসানের দাবি জানিয়ে এই পদক্ষেপ নিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এক্সটিনশন রেবেলিয়ন ও অন্যান্য অধিকার বিষয়ক কর্মীরা তেল শোধনাগারের প্রবেশদ্বার অবরোধ করেন এবং প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখেন। গ্রেটা থুনবার্গ বলেন, “আমরা এখানে এসেছি কারণ এটি স্পষ্ট যে তেল শিল্পের কোনও ভবিষ্যত নেই। fossil fuel পোড়ানো আমাদের গ্রহের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। নরওয়ের মতো তেল উৎপাদনকারী দেশের হাতে এই বিষয়ে রক্ত লেগে আছে।”
তেল শিল্পের এই কার্যক্রমে কার্বন নির্গমনের মাধ্যমে বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও বাড়ছে বলে পরিবেশকর্মীরা উল্লেখ করেন। তারা বলেন, তাদের আন্দোলন শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট শোধনাগারকে লক্ষ্য করেই নয়, বরং নরওয়ের সমগ্র তেল ও গ্যাস শিল্পকে দায়িত্ববান করতে চায়।
অধিকার ও পরিবেশ বিষয়ক এই কর্মীরা জানিয়েছেন, তারা পুরো সপ্তাহজুড়ে নরওয়ে জুড়ে বিক্ষোভ ও আন্দোলন চালানোর পরিকল্পনা করেছেন। তাদের আন্দোলন মূলত তেল ও গ্যাস শিল্পে নিরবিচ্ছিন্ন উৎপাদন বন্ধ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে দেশকে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীভূত।
মংস্টাড তেল শোধনাগারটি নরওয়ের ইকুইনর কোম্পানি পরিচালনা করে। নরওয়ে ইউরোপের সবচেয়ে বড় তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘদিন ধরেই এই শিল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, তেল ও গ্যাস শিল্পের কার্যক্রম শুধু কার্বন নির্গমন বাড়াচ্ছে না, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তবে নরওয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তেল শিল্পের মাধ্যমে দেশজুড়ে বহু মানুষের কর্মসংস্থান নিশ্চিত হচ্ছে। এছাড়া এই শিল্পের মাধ্যমে ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ সুরক্ষিত হচ্ছে। দেশটি মনে করে, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বৈশ্বিক জ্বালানি নিরাপত্তা রক্ষার জন্য তেল ও গ্যাস শিল্প অপরিহার্য।
ইকুইনরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ২০৩৫ সাল পর্যন্ত নরওয়ের তেল উৎপাদন দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেল পর্যন্ত রাখার পরিকল্পনা করছে। পাশাপাশি ২০৩৫ সাল পর্যন্ত দেশের গ্যাস উৎপাদন ৪০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নিয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে তেল ও গ্যাস শিল্পে বিনিয়োগ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে তারা জোর দিচ্ছে।
পরিবেশকর্মীরা মনে করছেন, বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে তৎপর না হলে ভবিষ্যতে প্রাণীর বাসস্থান, মানব স্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক সম্পদ সবই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা বলেন, নরওয়ের মতো ধনী তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোকে উদাহরণ স্থাপন করতে হবে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই আন্দোলন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরও নজর কেড়েছে। পরিবেশকর্মীরা আশা করছেন, তাদের পদক্ষেপ অন্য দেশগুলোকে তেল ও গ্যাস শিল্পে নির্ভরতা কমাতে এবং পরিবেশবান্ধব শক্তির দিকে মনোনিবেশ করতে অনুপ্রাণিত করবে।
repoter

