ছবি: -সংগৃহীত ছবি
দু’জনেই দিল্লির ছেলে। রাজ্য দলের জার্সি পড়ে একসঙ্গে খেলেছেন, পরে জাতীয় দলেও ছিলেন সতীর্থ। বর্তমান ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে একজন এখনও খেলছেন, অন্যজন ভারতের প্রধান কোচ। এই দুই খেলোয়াড়ের সম্পর্কের বিশেষত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন ভারতীয় দলের কোচ গৌতম গম্ভীর। সম্প্রতি তিনি তার সতীর্থদের নতুনভাবে নামকরণ করেছেন।
দিল্লি প্রিমিয়ার লিগের ফাইনালে বিশেষভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল গম্ভীরকে। ক্রিকেটে অবদানের জন্য তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সতীর্থদের নামকরণ করতে বলা হলে গম্ভীরের দেওয়া নামগুলো নিয়ে ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়। বিরাট কোহলিকে তিনি ‘দেশি বয়’ হিসেবে অভিহিত করেন। যেহেতু দু’জনেই দিল্লির ছেলে, তাই এই নাম দেওয়া হয়েছে।
গম্ভীর ও কোহলির সম্পর্ক ক্রিকেটের মাঠে যেমন ছিল তেমনি সামাজিক ও পেশাদারী জীবনে ছিল কিছুটা চ্যালেঞ্জিং। আইপিএলে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর অধিনায়ক থাকাকালীন সময়ে কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ক গম্ভীরের সঙ্গে কোহলির বিবাদ ঘটেছে। পরে লখনৌ সুপার জায়ান্টসের মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে মাঠে তাদের মধ্যে আরও একাধিকবার উত্তেজনা দেখা গিয়েছিল। উভয়কে জরিমানা করতে হয়েছে এবং সেই বিতর্ক সাংবাদিক ও অনুরাগীদের নজরে এসেছে।
তবে গম্ভীর ভারতের কোচ হওয়ার পর জানিয়েছেন, মাঠের ভিতরে তাদের বিবাদ ঘটেছে, কিন্তু মাঠের বাইরে কোহলির সঙ্গে তার কোনও সমস্যা নেই। কোহলিও কোনও বিতর্ক সৃষ্টি করতে চাননি। তবে গত আইপিএলে কোহলির টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণার পর অনেকে গম্ভীরকে দায়ী করেছেন।
কোহলির পাশাপাশি গম্ভীর আরও অনেক সতীর্থের জন্য বিশেষ বিশেষ নাম রেখেছেন। ক্রিকেটের প্রতিটি ক্ষেত্র এবং খেলোয়াড়দের বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করে নামগুলো বেছে নেওয়া হয়েছে। শচিন টেন্ডুলকরকে তিনি ‘ক্লাচ’ বলে অভিহিত করেছেন। জাসপ্রিত বুমরাকে ‘স্পিড’, শুবমান গিলকে ‘মোস্ট স্টাইলিশ প্লেয়ার’, রাহুল দ্রাবিড়কে ‘মিস্টার কনসিসটেন্ট’, ভিভিএস লক্ষ্মণকে ‘রান মেশিন’, জাহির খানকে ‘ডেথ ওভার স্পেশালিস্ট’, আর রিশাভ পান্তকে ‘মোস্ট ফানি’ নামে ডাকেন গম্ভীর।
গম্ভীরের এই নামকরণ শুধুমাত্র খেলার পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে নয়, বরং প্রতিটি খেলোয়াড়ের মাঠে থাকা আচরণ, স্টাইল এবং ক্রিকেটের প্রতি তাদের মনোভাবের প্রতিফলন। তিনি বলেন, এই নামগুলো খেলোয়াড়দের ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক এবং একই সঙ্গে তাদের গুণাবলীর প্রতি শ্রদ্ধার চিহ্ন।
গম্ভীরের সতীর্থদের সঙ্গে সম্পর্কও বিশেষ। মাঠে উত্তেজনা বা বিরোধ থাকলেও মাঠের বাইরে উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং পেশাদারী সম্মান বজায় থাকে। তিনি বলেন, খেলোয়াড় জীবনে কোহলির সঙ্গে কিছু উত্তেজনার ঘটনা ঘটেছে, তবে তা দলের জন্য এবং ক্রিকেটের স্বার্থে সীমিত। মাঠের বাইরে কোহলির সঙ্গে তিনি সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
নামকরণের বিষয়টি ক্রিকেট সমালোচক ও অনুরাগীদের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়েছে। গম্ভীরের দেওয়া নামগুলো শুধু খেলার দক্ষতা নয়, বরং খেলোয়াড়দের ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছে। ‘দেশি বয়’ থেকে ‘মোস্ট ফানি’— প্রতিটি নাম ক্রিকেটারদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তুলেছে।
আইপিএলের বিভিন্ন দলে নেতৃত্বের দায়িত্ব পালনকালে গম্ভীরের অভিজ্ঞতা তাকে সতীর্থদের আচরণ এবং খেলার ধরন বোঝার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে। তিনি বলেন, খেলোয়াড়দের নামকরণ একটি বন্ধুত্বপূর্ণ, উৎসাহব্যঞ্জক এবং সম্মানসূচক প্রক্রিয়া। এটি খেলোয়াড়দের মনোবল বৃদ্ধি করতে এবং দলের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সহায়তা করে।
দিল্লি প্রিমিয়ার লিগের ফাইনালের অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা পেতে গম্ভীর উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে কোহলি, টেন্ডুলকর, বুমরা, শুবমান, দ্রাবিড়, লক্ষ্মণ, জাহির ও পান্তসহ আরও অন্যান্য ক্রিকেটারদের নামকরণ করার মাধ্যমে উপস্থিত সবাইকে আনন্দিত করেছেন। এই উদ্যোগ ক্রিকেট প্রেমীদের মধ্যে নতুন আলোচনার বিষয় তৈরি করেছে।
গম্ভীরের মতে, সতীর্থদের নামকরণ কেবল খেলার দক্ষতার চিত্র নয়, এটি তাদের ব্যক্তিত্ব ও ক্রিকেটের প্রতি নিষ্ঠারও পরিচায়ক। তিনি আশা করেন, খেলোয়াড়রা এই নামগুলোর মাধ্যমে নিজেদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও সক্ষমতা আরও প্রকাশ করবে এবং দলকে আরও শক্তিশালী করবে।
repoter




