ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০২:০৮ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

গাজায় দুর্ভিক্ষের বাস্তবতা স্বীকার করলো জাতিসংঘ

repoter

প্রকাশিত: ০৬:৫৬:৪৭অপরাহ্ন , ২২ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ০৬:৫৬:৪৭অপরাহ্ন , ২২ আগস্ট ২০২৫

-সংগৃহীত ছবি

ছবি: -সংগৃহীত ছবি

প্রথমবারের মতো জাতিসংঘ-সম্পৃক্ত একটি সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে যে গাজা উপত্যকা দুর্ভিক্ষে আক্রান্ত। খাদ্য নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেইজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) জানায়, গাজায় পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও মৃত্যুর মুখোমুখি। সংস্থাটির মতে, গাজায় খাদ্য সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যা এখন সর্বোচ্চ মাত্রার সংকট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

আইপিসির প্রতিবেদনে গাজা শহর এবং আশপাশের অঞ্চলগুলোকে দুর্ভিক্ষ কবলিত ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ দেইর আল-বালাহ ও খান ইউনিস এলাকাও ভয়াবহ খাদ্য সঙ্কটে পড়বে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি স্পষ্ট করে জানায়, গাজার এই দুর্ভিক্ষ সম্পূর্ণ মানুষের তৈরি এবং তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদিও আইপিসি সরাসরি দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করে না, তবে তাদের বিশ্লেষণ সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে এমন ঘোষণা দেওয়ার ভিত্তি তৈরি করে দেয়।

অন্যদিকে, ইসরায়েল এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির সামরিক সংস্থা কো-অর্ডিনেশন অব গভর্নমেন্ট অ্যাকটিভিটিস (কোগ্যাট) দাবি করে, আইপিসির প্রতিবেদন মিথ্যা ও পক্ষপাতদুষ্ট। তাদের মতে, প্রতিবেদনে যে তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে তা মূলত হামাসের সরবরাহ করা আংশিক ও ভাসাভাসা তথ্যের ওপর নির্ভরশীল। ইসরায়েল তাই গাজা শহরে দুর্ভিক্ষের দাবি দৃঢ়ভাবে নাকচ করেছে।

জাতিসংঘের চারটি সংস্থা—খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), ইউনিসেফ, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)—এক যৌথ বিবৃতিতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক সহায়তা প্রবাহের আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাগুলো বলেছে, ক্ষুধা ও অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর ঝুঁকি দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে এবং তা ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন।

গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর থেকে দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিতে অন্তত ২৭১ জন মারা গেছে। মৃতদের মধ্যে ১১২ জন শিশু। জাতিসংঘের সংস্থাগুলো তাদের বিবৃতিতে সতর্ক করেছে যে শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি ভয়াবহ হারে বাড়ছে। কেবল জুলাই মাসেই ১২ হাজারেরও বেশি শিশু তীব্র অপুষ্টিতে আক্রান্ত বলে শনাক্ত করা হয়। তাদের মধ্যে প্রায় চারজনের মধ্যে একজন এমন অবস্থায় রয়েছে যা স্বল্পমেয়াদে জীবনঘাতী এবং দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী শারীরিক ও মানসিক প্রভাব ফেলতে পারে।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আইপিসির প্রতিবেদন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “যখন মনে হচ্ছিল গাজার জীবন্ত নরক বর্ণনা করার মতো আর কোনো শব্দ অবশিষ্ট নেই, তখনই নতুন শব্দ যুক্ত হলো—দুর্ভিক্ষ।” গুতেরেস এটিকে কেবল একটি মানবসৃষ্ট বিপর্যয় হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি মানবতার ব্যর্থতা ও নৈতিক সংকটের প্রতিফলন।

তার মতে, দুর্ভিক্ষ শুধু খাদ্যের অভাব নয়; এটি মানুষের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইচ্ছাকৃতভাবে ধ্বংস করার ফল। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে স্পষ্ট দায়িত্ব রয়েছে—গাজার মানুষের খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহ নিশ্চিত করা। গুতেরেস আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহ্বান জানান, এ পরিস্থিতি আর দায়মুক্তির মধ্যে চলতে দেওয়া যাবে না।

“অজুহাতের আর কোনো স্থান নেই। আগামীকাল নয়, এখনই পদক্ষেপ নেওয়া দরকার,” তিনি সতর্ক করেন। জাতিসংঘ প্রধান অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, সকল জিম্মির মুক্তি এবং গাজায় পূর্ণাঙ্গ ও নিরবচ্ছিন্ন মানবিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

গাজায় চলমান সংঘাতের মধ্যে দুর্ভিক্ষের এই আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা অবাধে পৌঁছানোর সুযোগ না দিলে গাজার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের অবসান ঘটাতে না পারলে এটি কেবল একটি আঞ্চলিক সংকট নয়, বরং বৈশ্বিক মানবিক ব্যর্থতার প্রতীক হয়ে থাকবে।

সূত্র: বিবিসি

repoter