
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ইসরায়েল রাষ্ট্র এবং চরম ডানপন্থি ইসরায়েলি মন্ত্রীদের ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব দিয়েছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান কায়া কালাস।
তিনি স্পষ্টভাবে জানান, এই প্রস্তাবের লক্ষ্য ইসরায়েলকে সরাসরি শাস্তি দেওয়া নয়, বরং গাজার মানবিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো। কালাস বলেন, “এই যুদ্ধের ইতি টানতেই হবে, মানুষের কষ্টের অবসান ঘটাতে হবে এবং বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এমন উদ্যোগ নিলেও প্রস্তাবটি কার্যকর হতে ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের সম্মতি প্রয়োজন। এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরেই মতভেদ থাকায় সিদ্ধান্তে পৌঁছানো কঠিন হতে পারে। সমালোচকরা বলছেন, ইইউ ইসরায়েলের ওপর পর্যাপ্ত চাপ প্রয়োগে ব্যর্থ হচ্ছে এবং তাদের অবস্থান এখনো অনেকটা দুর্বল।
জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা এ বিষয়ে অবগত থাকলেও এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। অন্যদিকে, গত সপ্তাহে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লায়েন ঘোষণা করেছিলেন, ইইউ ইসরায়েলকে অর্থ সহায়তা দেওয়া বন্ধ করবে।
এ ঘোষণার পর ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিডিয়ন সার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ “অসমানুপাতিক” এবং “অভূতপূর্ব”। তার মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এমন সিদ্ধান্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইসরায়েলের সামরিক অভিযান meanwhile আরও তীব্র হয়েছে। মঙ্গলবার গাজা উপত্যকার সবচেয়ে বড় নগরী গাজা সিটিতে ব্যাপক স্থল হামলা চালায় দখলদার বাহিনী। এই হামলায় মাত্র ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৭৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলার ধারাবাহিকতা চলছে। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, ওই সময় থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার ফিলিস্তিনি শিশু নিহত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজারের বেশি এবং আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ। অবরুদ্ধ উপত্যকায় মানবিক সংকট প্রতিদিনই তীব্র আকার ধারণ করছে।
আন্তর্জাতিক মহল বারবার যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানালেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাম্প্রতিক প্রস্তাবকে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তবে এটি কার্যকর হবে কিনা, কিংবা ইসরায়েলের ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি করতে পারবে—সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
গাজার পরিস্থিতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। মানবিক সংস্থাগুলো বলছে, অবরুদ্ধ এ অঞ্চলে খাদ্য, ওষুধ ও আশ্রয়ের তীব্র সংকট চলছে। হাসপাতালগুলো ভেঙে পড়েছে, আহতদের চিকিৎসা দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার দাবি জোরালো হচ্ছে।
সূত্র: আল-জাজিরা।
repoter