ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০২:২৭ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

এক লাখ শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল দক্ষতা প্রশিক্ষণ দেবে সরকার

repoter

প্রকাশিত: ০৬:৫৯:০২অপরাহ্ন , ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ০৬:৫৯:০২অপরাহ্ন , ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

-সংগৃহীত ছবি

ছবি: -সংগৃহীত ছবি

বাংলাদেশ সরকার দেশব্যাপী এক লাখ শিক্ষার্থীকে ডিজিটাল স্কিলস প্রশিক্ষণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের মাধ্যমে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ও জেনারেটিভ এআই সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে না পড়ে। প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বুধবার রংপুরে এক অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন।

রংপুরে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের আঞ্চলিক কার্যালয়ে জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে কম্পিউটার ফান্ডামেন্টাল এবং ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধনকালে তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন। এ সময় তিনি বলেন, “প্রশিক্ষণার্থীদের মতামত নিয়ে এ প্রশিক্ষণকে আরও সময়োপযোগী করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তি দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। যদি আমরা এআই এবং জেনারেটিভ এআই সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে না পারি, তাহলে দেশীয় পর্যায়ে যেমন পিছিয়ে পড়ব, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও পিছিয়ে যেতে হবে।”

তিনি রংপুর অঞ্চলের ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “রংপুরের মানুষের আত্মত্যাগ জাতির ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। তাই এখান থেকেই আমরা এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সূচনা করেছি। দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কৃতির কারণে রংপুর উন্নয়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে ছিল। আমরা চাই প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এ অঞ্চলকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে। এজন্য বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্থানীয় উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঙ্গে নেওয়ার পরিকল্পনা করছি।”

প্রশিক্ষণের কাঠামো সম্পর্কে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পাশাপাশি একটি পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে দেশের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজে ৪২ ঘণ্টার আইসিটি বিষয়ক মৌলিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরবর্তী ধাপে উন্নততর প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হবে। ধীরে ধীরে এই কর্মসূচির সঙ্গে মাদ্রাসাগুলোও যুক্ত হবে।

তিনি আরও বলেন, “এই প্রকল্পের আওতায় দেশের ১০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি আরআইসি ল্যাব স্থাপন করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গবেষণার সুযোগ পাবে, যা দেশের প্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি আমরা ভ্রাম্যমাণ আইসিটি ল্যাব চালুর পরিকল্পনা নিয়েছি। বিশেষ গাড়িতে এসব ল্যাব সাজানো হবে, যাতে মানুষ যেখানে আছে সেখানেই গিয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান সম্ভব হয়।”

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, “জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের নির্দেশনায় শহীদ আবু সাঈদের ভূমি থেকে প্রশিক্ষণের সূচনা করা হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য হলো ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশনের স্বপ্নের সঙ্গে জুলাই যোদ্ধাদের সম্পৃক্ত করা।”

প্রথম পর্যায়ে রংপুর বিভাগের জুলাই যোদ্ধাদের জন্য সাত দিনব্যাপী আইসিটি প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। এ পর্বে ২০ জন শিক্ষার্থীকে কম্পিউটার ফান্ডামেন্টাল এবং আরও ২০ জনকে ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল আয়োজিত এই প্রশিক্ষণ ধীরে ধীরে দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হবে।

প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে টাঙ্গাইলের গোরস্থান জামিয়া ইসলামিয়া দারুস-সুন্নাহ মাদরাসায় মাসব্যাপী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে ১৬০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। ১৬ আগস্ট শুরু হওয়া এ প্রশিক্ষণ সফলভাবে শেষ হওয়ার পর চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও টাঙ্গাইলের আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে মোট ৭৪০ জন মাদ্রাসা শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হয়েছে।

সরকার মনে করছে, এই উদ্যোগ দেশের শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল সক্ষমতা বাড়াবে এবং কর্মসংস্থানের নতুন ক্ষেত্র তৈরি করবে। বিশ্ব অর্থনীতিতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের যে ভূমিকা ক্রমশ বাড়ছে, সেখানে বাংলাদেশের তরুণদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য এ প্রশিক্ষণ অত্যন্ত জরুরি। বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও জেনারেটিভ এআই-এর মতো আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা ও দক্ষতা না থাকলে ভবিষ্যতে দেশ বড় ধরনের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে কেবল অবকাঠামো নির্মাণ যথেষ্ট নয়; মানবসম্পদকে প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষতায় গড়ে তুলতে হবে। এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে। এ ছাড়া, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম ফ্রিল্যান্সিং, উদ্যোক্তা কার্যক্রম এবং আন্তর্জাতিক আউটসোর্সিং বাজারে কাজ করার সুযোগ পাবে।

প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় প্রশাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং আইসিটি বিভাগের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণে আগ্রহী করে তুলতে আধুনিক পাঠ্যবিষয়, ব্যবহারিক অনুশীলন ও ইন্টারেক্টিভ পদ্ধতির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রশিক্ষণ তরুণদের শুধু প্রযুক্তি শেখাবে না, বরং তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা মানসিকতা গড়ে তুলবে।

সবশেষে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “প্রযুক্তি এখন বিলাসিতা নয়, প্রয়োজন। আমাদের সন্তানদের হাতে এই দক্ষতা পৌঁছে দিতে পারলে তারা শুধু নিজেদের জীবনই পরিবর্তন করবে না, বরং দেশকেও উন্নতির পথে নিয়ে যাবে। সরকারের এ উদ্যোগ আগামী প্রজন্মের জন্য নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করবে।”

repoter