ছবি: ছবি: সংগৃহীত
উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় প্রাণ হারালেন কো-অর্ডিনেটর মাহরীন চৌধুরী, শেষ মুহূর্তে বর্ণনা করেন শিশুদের রক্ষার চেষ্টা
রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হন স্কুলের কো-অর্ডিনেটর মাহরীন চৌধুরী। মৃত্যুর আগে হাসপাতালের আইসিইউতে স্বামী মনছুর হেলালের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। স্বামীকে তিনি জানান শিশুদের বাঁচানোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কথা, যা করতে গিয়ে দ্বিতীয় বিস্ফোরণে তিনি গুরুতর দগ্ধ হন।
ঘটনার দিন সোমবার (২১ জুলাই) দুপুর ১টা ১৮ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি এফটি-৭ বিজিআই মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতরে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করেছিল এবং মাত্র ১২ মিনিটের মধ্যে দুর্ঘটনার শিকার হয়। বিমানটি আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায় এবং মুহূর্তেই চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক ও বিভীষিকা।
বিধ্বস্ত হওয়ার সময় স্কুল প্রাঙ্গণে উপস্থিত ছিলেন কো-অর্ডিনেটর মাহরীন চৌধুরী। বিমানের আঘাতে এবং প্রথম বিস্ফোরণের পরই তিনি দেখতে পান চারপাশে শিশুরা আগুনে ঝলসে যাচ্ছে। তখন নিজের জীবন না ভেবে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন তিনি। এরপর আরও কিছু শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করতে গিয়ে ঘটে দ্বিতীয় বিস্ফোরণ, যা তার শরীরের প্রায় ১০০ শতাংশ পুড়িয়ে দেয়।
তাকে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নেওয়া হয়। আইসিইউতে রাখা হয় লাইফ সাপোর্টে। মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মাহরীনের স্বামী মনছুর হেলাল বলেন, তার স্ত্রী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে তাকে বলেন, "আমার বাচ্চাদের দেখো।" তিনি আরও বলেন, "আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কেন এ কাজ করতে গেলা? সে বলল, আমার সামনে আমার বাচ্চারা পুড়ে মারা যাচ্ছে, আমি কীভাবে দাঁড়িয়ে থাকি?"
মনছুর হেলাল জানান, মাহরীন যখন জানতেন হয়তো আর দেখা হবে না, তখন তাকে বলেছিলেন, "তোমার সঙ্গে আর দেখা হবে না।" তিনি নিজের পোড়া হাত ধরে স্বামীকে অনুভব করার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই তিনি বারবার বলতে থাকেন, "তারা শুধু আমার স্কুলের বাচ্চা না, তারাও তো আমার বাচ্চা।"
ঢামেক বার্ন ইউনিটের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান জানিয়েছেন, মাহরীনের শরীরের শতভাগ পুড়ে গিয়েছিল এবং চিকিৎসা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সোমবার রাতেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এই দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। দুর্ঘটনার পরপরই উদ্ধার অভিযান শুরু হয় এবং আহতদের হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে আগুন এবং ধ্বংসস্তূপের কারণে অনেককে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
মাহরীনের মৃত্যুতে গভীর শোক নেমে এসেছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, সহকর্মী এবং গোটা শিক্ষাঙ্গনে। তার আত্মত্যাগ এবং দায়িত্ববোধ অনেকের হৃদয় স্পর্শ করেছে। নিজের জীবনের বিনিময়ে তিনি শিক্ষার্থীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন, যা আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
repoter




