ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০৩:৪৪ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

দূরপাল্লার বাসে বাধ্যতামূলক হচ্ছে সিসি ক্যামেরা, সাত দিনের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ

repoter

প্রকাশিত: ০৬:৫৮:২৯অপরাহ্ন , ৩০ মে ২০২৫

আপডেট: ০৬:৫৮:২৯অপরাহ্ন , ৩০ মে ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

ডাকাতি, ছিনতাই ও নারী যাত্রী হয়রানি ঠেকাতে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির চূড়ান্ত নির্দেশনা; নিয়ম না মানলে বাস চলাচলে সিরিয়াল বন্ধসহ আইনি ব্যবস্থা

ঈদসহ বিভিন্ন মৌসুমে দূরপাল্লার যাত্রায় নিরাপত্তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে বাসে ছিনতাই, ডাকাতি এবং নারী যাত্রীদের প্রতি হয়রানিমূলক ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাত্রী নিরাপত্তাকে উদ্বেগজনক করে তুলেছে। এ অবস্থায় এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ এবং দূর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি দেশের সব দূরপাল্লার বাসে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে।

গত শনিবার সমিতির মহাসচিব মো. সাইফুল আলম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিটি দূরপাল্লার বাসে আগামী সাত দিনের মধ্যে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। এই নির্দেশনা মালিক সমিতির সব জেলা শাখা এবং সংশ্লিষ্ট বাস কোম্পানিগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্যামেরা স্থাপন না করলে সংশ্লিষ্ট বাস মালিকদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি এসব বাসের চলাচলের সিরিয়াল স্থগিত রাখা হবে বলেও জানানো হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে দূরপাল্লার বাসে যাত্রীদের সঙ্গে ঘটছে একের পর এক ডাকাতি, ছিনতাই ও নারী যাত্রীদের হেনস্তার ঘটনা। পাশাপাশি, অতিরিক্ত গতিতে চালানোর কারণে দুর্ঘটনার হারও উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। ফলে সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অপরাধের সঠিক তদন্ত এবং দায়ীদের শনাক্ত করা সহজ হবে বলে মনে করছে মালিক সমিতি।

এই নির্দেশনা অনুসারে, আগামী ১ জুনের মধ্যে সিসি ক্যামেরা বসানো না হলে, যে বাসগুলো এই নির্দেশনা মানবে না তাদের চালনার সিরিয়াল বন্ধ রাখা হবে এবং প্রয়োজনে প্রশাসনের সহায়তায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মালিক সমিতিকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিল। সে অনুসারেই মালিক সমিতি এবার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে।

এছাড়া, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি গত ২০ মে এক পৃথক চিঠিতে জানিয়েছিল, দূরপাল্লার বাসে দুর্ঘটনার হার বেড়ে গেছে। তারা সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারদের ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলতে বিশেষভাবে সতর্ক থাকার জন্য কাউন্সেলিং করার আহ্বান জানিয়েছে। তারা চায় বাসচালকরা যেন অতিরিক্ত গতি, বেপরোয়া ওভারটেকিং এবং নিয়মভঙ্গ করে গাড়ি পরিচালনা না করেন।

চিঠিতে আরো বলা হয়, দুর্ঘটনার প্রবণতা কমাতে মালিকরা যেন তাদের গাড়ির চালক ও স্টাফদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের আওতায় আনেন এবং যানবাহনে গতি নিয়ন্ত্রণের জন্য স্পিড গভর্নর নিশ্চিত করেন। যদি স্পিড গভর্নর সঠিকভাবে সিল করা না থাকে, তাহলে সেই গাড়িগুলোর ক্ষেত্রেও একই রকম প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সড়ক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সিসি ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ একদিকে যেমন যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, অন্যদিকে অপরাধীদের শনাক্তকরণেও সহায়ক হবে। তবে তারা মনে করেন, এই উদ্যোগ কার্যকর করতে হলে তদারকি এবং নিয়মিত নজরদারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে যাত্রী সাধারণের অনেকেই এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরেই দূরপাল্লার বাসে যাত্রী হয়রানি ও অপরাধ প্রবণতা বেড়েছে। অনেক সময় এসব অপরাধের কোনো প্রমাণ বা সাক্ষী না থাকায় অপরাধীরা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। সিসি ক্যামেরা থাকলে অপরাধীরা সহজেই চিহ্নিত হবে এবং যাত্রীদের মধ্যে নিরাপত্তা ভাবও তৈরি হবে।

বাস মালিকদের একাংশ অবশ্য এই ব্যবস্থাকে সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হিসেবে দেখছেন। তাদের দাবি, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট সময় আরও বাড়ানো উচিত এবং সরকারের পক্ষ থেকেও আর্থিক সহায়তা বা কর রেয়াত দেওয়া উচিত। তবে যাত্রী নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে মালিক সমিতি এ ব্যাপারে আপসহীন মনোভাব দেখিয়েছে।

চলতি বছরের ঈদ যাত্রায় ইতোমধ্যেই দূরপাল্লার কিছু রুটে একাধিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজধানী থেকে উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীদের অনেকেই তাদের অভিজ্ঞতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে রাতের বাসে নারী যাত্রীদের নিরাপত্তা ঘিরে রয়েছে গুরুতর উদ্বেগ। এ পরিস্থিতিতে বাসে সিসি ক্যামেরা বসানোর নির্দেশনা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি জানিয়েছে, দেশের সব জেলা ও রুটে এই নির্দেশনা সমানভাবে কার্যকর হবে এবং কেউই এর বাইরে থাকবে না। তারা আশা করছে, মালিকপক্ষ সরকারি নির্দেশনার প্রতি সম্মান দেখিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সড়কপথে যাত্রী সুরক্ষা আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে এর সফলতা নির্ভর করবে বাস্তবায়ন ও পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার উপর।

repoter