ছবি: -সংগৃহীত ছবি
প্রায় সাড়ে চার মাস শূন্য থাকার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) নতুন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পেলেন ডিআইজি শফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি ডিএমপিতে পদায়ন পাওয়া এই কর্মকর্তা মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নেন। এর মাধ্যমে ডিবি শাখায় দীর্ঘদিনের নেতৃত্বশূন্যতা কাটল।
ডিবির প্রধানের পদটি শূন্য হয়ে যায় গত ১২ এপ্রিল। ওইদিন তৎকালীন প্রধান রেজাউল করিম মল্লিককে হঠাৎ করেই কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরে তাকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে বদলি করা হয়। এরপর থেকে যুগ্ম-কমিশনার পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা ডিবির কার্যক্রম সামলাচ্ছিলেন। ফলে কার্যত এ গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট দীর্ঘদিন ধরে পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্ববিহীন অবস্থায় চলছিল।
শফিকুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের মাধ্যমে যোগ দেন পুলিশ বাহিনীতে। চাকরিজীবনের শুরুতে তিনি লক্ষ্মীপুরে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) পদে যোগ দেন। ২০০২ সালে বদলি হয়ে আসেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে। সেখানে প্রায় পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়েই তিনি রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
পরে তিনি যোগ দেন সারদা পুলিশ একাডেমিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রেনিং) হিসেবে। প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে ২০০৭ সালের জুনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে লাইবেরিয়ায় যান। মিশন শেষে ২০১০ সালে দেশে ফিরে চট্টগ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পান। আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার কারণে তাকে আবারও দ্বিতীয় দফায় লাইবেরিয়া পাঠানো হয় শান্তিরক্ষা মিশনে।
২০১৩ সালে তিনি পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) হন এবং সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরের বছরেই আবার জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগ দেন আইভরি কোস্টে। এই মিশন শেষে দেশে ফিরে যোগ দেন হাইওয়ে পুলিশের এসপি হিসেবে।
২০১৯ সালে তাকে নৌ-পুলিশের এসপি পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর তার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার স্বীকৃতি হিসেবে ২০২১ সালে পদোন্নতি পান অতিরিক্ত ডিআইজি (অ্যাডমিন অ্যান্ড অপারেশন্স) হিসেবে। এই সময়ে তিনি নৌ-পুলিশের প্রশাসন ও কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্ব সামলান। এরপর আরও পদোন্নতি পেয়ে তিনি ডিআইজি হিসেবে হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
পুলিশ ক্যারিয়ারে শফিকুল ইসলাম নিজেকে একজন অভিজ্ঞ ও যোগ্য কর্মকর্তা হিসেবে প্রমাণ করেছেন। মাঠপর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মিশনে দায়িত্ব পালনে তিনি রেখেছেন সাফল্যের স্বাক্ষর। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা তার পেশাগত জীবনকে করেছে আরও সমৃদ্ধ। বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশাসনিক দক্ষতা ও নেতৃত্বের কারণে ধাপে ধাপে পদোন্নতির সিঁড়ি বেয়ে তিনি পৌঁছেছেন ডিআইজি পদে।
গোয়েন্দা শাখা পুলিশ বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটগুলোর একটি। সন্ত্রাস দমন, সংঘবদ্ধ অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, নাশকতা প্রতিরোধ এবং বিশেষ গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনায় এ ইউনিট দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তাই ডিবির প্রধান পদটি পুলিশ বাহিনীর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়। নতুন দায়িত্বে যোগ দিয়ে শফিকুল ইসলামকে তাৎক্ষণিকভাবে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।
রাজধানীতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, নানা ধরনের অপরাধচক্র এবং চোরাচালান রোধে ডিবির ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। পাশাপাশি সাইবার অপরাধ দমনেও এ ইউনিটকে এখন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। তাই নতুন প্রধান হিসেবে শফিকুল ইসলামকে গোয়েন্দা কার্যক্রমকে আরও আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর করার দায়িত্ব নিতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুলিশ বাহিনীর অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, তার অভিজ্ঞতা ও পেশাদারিত্ব কাজে লাগিয়ে ডিবিকে আরও শক্তিশালী ও কার্যকর করতে পারবেন শফিকুল ইসলাম। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অর্জিত অভিজ্ঞতা এবং দেশে মাঠপর্যায়ের কাজের অভিজ্ঞতা মিলিয়ে তিনি নতুন দায়িত্বে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন বলেও আশা করা হচ্ছে।
শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার পর সহকর্মী কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেছেন, গোয়েন্দা পুলিশকে জনআস্থার প্রতীক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। এজন্য স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং পেশাদারিত্বকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
চার মাসের বেশি সময় ধরে শূন্য থাকা ডিবি প্রধানের পদে তার যোগদানের মাধ্যমে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল তা পূরণ হলো। এখন নজর থাকবে তিনি কীভাবে রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই গোয়েন্দা ইউনিটকে নেতৃত্ব দেন এবং নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন।
repoter




