ঢাকা ও আশপাশের জেলাজুড়ে আজ সকালে অনুভূত মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পে অন্তত ১০ জন নিহত এবং ছয় শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল রাজধানী থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে নরসিংদীর মাধবদী, যা রিখটার স্কেলে ৫.৭ মাত্রায় রেকর্ড করা হয়—মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএসের তথ্য অনুযায়ী মাত্রা ছিল ৫.৫। উৎপত্তিস্থল অগভীর হওয়ায় ঢাকায় কম্পন অস্বাভাবিকভাবে তীব্র অনুভূত হয়।
শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে আঘাত হানা ভূমিকম্পে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাসাবাড়ি, হাসপাতাল, অফিস ও মার্কেটে থাকা মানুষজন দৌড়ে রাস্তায় নেমে আসেন। খোলা জায়গার অভাবে অনেকেই ভবনের নিচে বা সরু গলিতে অবস্থান নেন, যা নিরাপত্তাহীনতা আরও বাড়ায়। বিভিন্ন এলাকায় দেয়াল ধস, রেলিং ভাঙা এবং ভবনে ফাটল ধরার খবর পাওয়া গেছে। নরসিংদীতে ৫ জন, ঢাকায় ৪ জন এবং নারায়ণগঞ্জে ১ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার এত কাছাকাছি ৪ মাত্রার বেশি ভূমিকম্প এর আগে হয়নি। বুয়েটের অধ্যাপক মেহেদি আহমেদ আনসারী জানান, উৎপত্তিস্থল মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় ঝাঁকুনি এভাবে তীব্র অনুভূত হয়েছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, বড় মাত্রার ভূমিকম্পের পুনরাবৃত্তি সাধারণত ১৫০ বছর পরপর হয়, তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি ও সতর্কতা বাড়ানো জরুরি।
ইউএসজিএস জানায়, এই ভূমিকম্পে ৭ কোটির বেশি মানুষ মৃদু কম্পন এবং আরও প্রায় ৬.৭ কোটি মানুষ হালকা ঝাঁকুনি অনুভব করেছেন। ঢাকায় শক্তিশালী কম্পন পেয়েছেন ১ কোটির বেশি মানুষ। সংস্থাটি ভূমিকম্পটিকে ‘কমলা ঝুঁকি শ্রেণি’তে রেখেছে, যার অর্থ প্রাণহানি ও উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্ভাবনা তুলনামূলকভাবে কম, যা ‘হলুদ শ্রেণি’তে বিবেচিত।
রাজউকের ২০২৪ সালের ‘আরবান রেজিলিয়েন্স’ গবেষণায় দেখা যায়, ঢাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে নিম্নাঞ্চলে থাকা ভবনগুলোর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। পুরান ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত অঞ্চল তুলনামূলক উঁচু হলেও প্রগতি সরণি, পূর্বাচল, হাজারীবাগ, শ্যামলী, ঢাকা উদ্যান ও উত্তরা—এসব ভরাট নিম্নভূমির এলাকা ভয়াবহ ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ঘটনার পর আবারও স্পষ্ট হলো যে ঢাকার অবকাঠামো বড় ধরনের ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত নয়। ভবন নির্মাণ বিধি প্রয়োগ ও জরুরি প্রস্তুতি জোরদার করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।