ছবি: ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামে রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজে কমিশনপ্রাপ্ত ৫২ জন নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে প্রগতিশীল, প্রযুক্তিনির্ভর নৌবাহিনী গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান
বাংলাদেশের সার্বভৌমতা ও সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা রক্ষায় সদা প্রস্তুত থাকতে সদ্য কমিশনপ্রাপ্ত নৌবাহিনীর নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদের স্থলাভিষিক্ত জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, সততা, সঠিক নেতৃত্ব এবং আত্মত্যাগের মন্ত্র ধারণ করে নৌবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে।
রবিবার (২২ জুন) চট্টগ্রামের বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে আয়োজিত গ্রীষ্মকালীন রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেনাপ্রধান এ কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানে মিডশিপম্যান ২০২২-বি ব্যাচ এবং ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার ২০২৫-এ ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ করে মোট ৫২ জন নবীন কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে কমিশন লাভ করেন।
সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক নৌবাহিনী গঠনের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ একটি ত্রিমাত্রিক শক্তিতে রূপ নিয়েছে, যারা সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি সমুদ্রসম্পদ সংরক্ষণ, সমুদ্রপথে অপরাধ দমন এবং আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে কঠোর পরিশ্রম, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলা বজায় রেখে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
এ সময় তিনি প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশের ভেতরে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নৌবাহিনীর মানবিক সহায়তা ও ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ এর আওতায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা রক্ষার প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে নবীন কর্মকর্তাদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন।
এবারের রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজের মাধ্যমে কমিশনপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন ৪৪ জন মিডশিপম্যান এবং ৮ জন ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার। কমিশনপ্রাপ্তদের মধ্যে ৮ জন নারী কর্মকর্তা এবং ৪ জন বিদেশি কর্মকর্তা রয়েছেন, যা এই আয়োজনকে আরও বৈচিত্র্যময় করে তোলে।
অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন। এরপর তিনি কৃতি প্রশিক্ষণার্থীদের হাতে বিভিন্ন বিভাগে পদক তুলে দেন। সব বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য মিডশিপম্যান মেহেদী হাসান মৃধা, (এক্স), বিএন ‘সোর্ড অব অনার’ লাভ করেন। প্রশিক্ষণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মান অর্জন করে মিডশিপম্যান মো. মেহেরাব হক তনি, (এক্স), বিএন ‘নৌ প্রধান স্বর্ণপদক’ লাভ করেন। আর ডাইরেক্ট এন্ট্রি অফিসার এ্যাক্টিং সাব লেফটেন্যান্ট রাজীব দত্ত, (শিক্ষা), বিএন ‘বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক’ অর্জন করেন।
এবারই প্রথমবারের মতো ‘বিএনএ আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক’ পেয়েছেন বিদেশি মিডশিপম্যান অবহরিরা এলবাদাভী আহমেদ আবদেল নাইম, যিনি সেরা চৌকস বিদেশি মিডশিপম্যান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
অনুষ্ঠানের একপর্যায়ে নবীন কর্মকর্তারা দেশ ও জাতির প্রতি আনুগত্য এবং দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার শপথ গ্রহণ করেন।
এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তারা, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি ছিল উৎসবমুখর ও গর্বে উদ্ভাসিত এক আভিজাত্যপূর্ণ আয়োজন, যা নতুন কর্মকর্তাদের জীবনের এক স্মরণীয় অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে।
সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে আরও বলেন, একটি দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে বাহিনীগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সমন্বয় এবং প্রশিক্ষণই সবচেয়ে বড় শক্তি। তিনি নবীন কর্মকর্তাদের আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রতিটি দিনই তাদের কাছে দেশ ও জাতির সেবায় এক নতুন প্রতিজ্ঞা নিয়ে আসবে।
এই আয়োজনে যে প্রেরণা ও প্রত্যয় দেখা গেছে, তা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ভবিষ্যৎ নেতৃত্বকে আরও শক্তিশালী, দক্ষ ও সচেতন করে তুলবে বলেই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
repoter




