
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে চরম ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) পদপ্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান। মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আবিদুল ইসলাম খান বলেন, তারা যখন বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গিয়েছেন, তখন প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের যথাযথভাবে সহযোগিতা করা হয়নি। তার অভিযোগ, “আমাদের এতিমের মতো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের সময় নষ্ট করা হয়েছে।” তিনি মনে করেন, এ ধরনের আচরণ প্রমাণ করে যে প্রশাসন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
তিনি আরও জানান, ভোটকেন্দ্রে গিয়ে তারা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পান। রোকেয়া হল থেকে এক শিক্ষার্থী এসে তাদের জানান যে, ভোট দেওয়ার জন্য যে ব্যালট পেপার হাতে পেয়েছেন, তাতে আগেই কিছু প্রার্থীর নামের পাশে ক্রস চিহ্ন দেওয়া ছিল। আবিদুলের ভাষায়, “রোকেয়া হলের এক শিক্ষার্থী কেন্দ্র থেকে বের হয়ে এসে কেঁদে কেঁদে জানায়, ভাই আমাদের দেওয়া ব্যালটে আগে থেকেই সাদিক কায়েম ও এস এম ফরহাদের নামের পাশে ক্রস দেওয়া ছিল। এটা শুধু ওই কেন্দ্রেই হয়নি। একই ঘটনা অমর একুশে হলেও ঘটেছে।”
এই অভিযোগের বিষয়ে তিনি অনুসন্ধান চালানোর চেষ্টা করেন বলে জানান। তার দাবি, “পরে আমি কেন্দ্রের চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তার অনুমতি নিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গেলে তারা আমাকে জানালেন—এটা কীভাবে হয়েছে তারা জানেন না।” আবিদুল বলেন, এই উত্তর কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, এক বা দুই কেন্দ্রেই যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তবে অন্য কেন্দ্রেও ঘটতে পারে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা জানি না কতগুলো ব্যালটে আগে থেকেই এভাবে চিহ্ন দেওয়া ছিল। তবে দুইটি কেন্দ্রে নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে সন্দেহ হচ্ছে, আরও অনেক ব্যালট আগেই চিহ্ন দিয়ে রাখা হয়েছিল এবং সেগুলো ব্যালট বাক্সে ঢোকানো হয়েছে কি না তা আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।”
আবিদুল ইসলাম খান মনে করেন, এ ধরনের ঘটনা নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তিনি বলেন, “যদি একজন ভোটার তার হাতে দেওয়া ব্যালট পেপারে আগে থেকেই চিহ্নিত প্রার্থী পান, তবে সেটি স্পষ্ট কারচুপি ছাড়া আর কিছু নয়।”
তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, “যারা নির্বাচনী দায়িত্বে ছিলেন, তাদের উদাসীনতা বা ইচ্ছাকৃত ভুলের কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তারা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন।”
এসময় তিনি দাবি করেন, নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির বিষয়টি শুধু অভিযোগে সীমাবদ্ধ নয়, বরং হাতে-কলমে প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই প্রশাসনের উচিত হবে এ ধরনের অনিয়মের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। তিনি বলেন, “আমরা চাই নির্বাচনটি স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হোক। কিন্তু যে চিত্র আমরা দেখেছি, তাতে জনগণ ও শিক্ষার্থীদের আস্থা হারানোর যথেষ্ট কারণ তৈরি হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও তাদের সর্বত্রই প্রশাসনিক বাধা ও অনিয়মের মুখে পড়তে হয়েছে। তিনি বলেন, “যেখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, সেখানে এমন অনিয়ম গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে।”
আবিদুল ইসলাম খান শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন অনিয়মের তদন্ত করে সঠিক পদক্ষেপ নেয়। তার দাবি, প্রশাসন যদি ন্যায়সংগতভাবে দায়িত্ব পালন করে তবে শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। অন্যথায়, এই নির্বাচন ইতিহাসে আরেকটি কলঙ্কজনক অধ্যায় হয়ে থাকবে।
repoter