ছবি: -সংগৃহীত ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের পরিবেশ অনুকূল রয়েছে এবং অংশগ্রহণ আরও সহজ করতে বুথের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিফ রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন কোনো ধরনের চাপের মুখে নেই এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন–২০২৫ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এসব তথ্য দেন তিনি। তার বক্তব্যে মূল গুরুত্ব পায় নির্বাচনকালীন সাইবার নিরাপত্তা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার প্রতিরোধের বিষয়টি।
মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে অনলাইনে অপপ্রচার রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সাইবার বুলিংকে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার জন্য একটি আলাদা টাস্কফোর্স কাজ করছে। তিনি জানান, কোনো ধরনের মিথ্যা প্রচারণা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো কার্যক্রমে কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।
এসময় ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন–২০২৫ নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রধান গোলাম রব্বানীও সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। তিনি জানান, অভিযুক্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেজগুলোর অ্যাডমিনদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা হয়েছে এবং তাদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ–২” নামের একটি পেজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, উক্ত পেজের অ্যাডমিনকে সতর্ক করার পর তিনি প্রার্থীতা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন এবং তার প্যানেল থেকেও নাম প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ঘটনা প্রমাণ করে যে নির্বাচন কমিশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।
গোলাম রব্বানী বলেন, “অভিযুক্ত পেজগুলোর অ্যাডমিনদের আমরা ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছি। সামনে আরও দুই দিন সময় রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে তারা যদি দায়িত্বশীল আচরণ না করে তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি উল্লেখ করেন যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়ানোর মাধ্যমে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা কারও জন্য সহনীয় হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান, ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্ন অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বুথের সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং নির্বাচন কমিশন যৌথভাবে কাজ করবে যাতে ভোটের দিন কোনো প্রকার অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলার সুযোগ না থাকে।
এছাড়া ভোট গ্রহণের সময় যেন শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াকে সহজ করার বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নির্বাচনী আমেজ ইতোমধ্যেই তৈরি হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন তাদের প্রার্থীদের প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছে। পোস্টার, লিফলেট বিতরণ, মতবিনিময় সভা এবং সাংগঠনিক কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের সমর্থন আদায়ে সচেষ্ট। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু প্রার্থীর বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, নির্বাচনকে ঘিরে কোনো পক্ষই যেন অনলাইনে অপপ্রচার চালিয়ে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করতে না পারে, তা নিশ্চিত করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করতে বিশেষ মনিটরিং টিম কাজ করছে। তারা নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ফেসবুক পেজ, গ্রুপ এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পর্যবেক্ষণ করছে।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ এবং আগ্রহও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী মনে করছেন, এবার নির্বাচনটি সুষ্ঠুভাবে হলে তাদের মতামত ও দাবি-দাওয়ার যথাযথ প্রতিফলন ঘটবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে আরও শক্তিশালী করবে।
নির্বাচন ঘিরে বাড়তি বুথ স্থাপনের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। অনেকে বলছেন, এতে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া আরও সহজ এবং দ্রুত হবে। বিশেষ করে যারা হলে থাকেন না, তাদের জন্য নতুন বুথ ব্যবস্থা স্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
সংবাদ সম্মেলনের শেষদিকে চিফ রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বলেন, “আমরা চাই শিক্ষার্থীরা নিরাপদ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক। কোনো ধরনের আতঙ্ক বা অনিয়মের সুযোগ রাখা হবে না। ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে সবার সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বুথ বাড়ানো, সাইবার বুলিং প্রতিরোধ এবং কঠোর নজরদারি মিলিয়ে এবারের ডাকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের কাছে গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক হবে।
repoter




