ছবি: -সংগৃহীত ছবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নতুন চারটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শনিবার চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটটি কেন্দ্রে। তবে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে বুথের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। পূর্বনির্ধারিত ৫০০ বুথ থেকে বেড়ে মোট ৭১০ বুথে ভোটগ্রহণ করা হবে।
এছাড়া ভোটগ্রহণের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে বিরতিহীনভাবে টানা আট ঘণ্টা ভোট চলবে। একই সঙ্গে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো, বিকাল ৪টার মধ্যে যারা ভোটকেন্দ্রের লাইনে উপস্থিত থাকবে, তাদের সবাইকে ভোটদানের সুযোগ দেওয়া হবে।
চিফ রিটার্নিং অফিসারের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই নতুন সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা এবং নির্বিঘ্নভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন মনে করছে, বুথের সংখ্যা বাড়ানোয় ভোটারদের জন্য ভোট দেওয়া আরও সহজ হবে এবং কেন্দ্রে চাপ কম পড়বে।
ডাকসু নির্বাচন সবসময় ঢাকার রাজনীতিসহ দেশের বৃহত্তর ছাত্র রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। দীর্ঘদিন পর এই নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা ও সর্বাধিক সংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভোটগ্রহণের সব প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। নির্বাচনের দিনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রস্তুত রাখা হবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারী দায়িত্ব পালন করবেন। বুথ বাড়ানোর ফলে ভোটারদের জন্য সুবিধা বাড়বে, আর দীর্ঘ লাইনের চাপ কিছুটা হলেও কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি ও গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্রে ডাকসু নির্বাচন একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বহন করে। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ছাত্র সংগঠনগুলো ইতিমধ্যে প্রচারণা শুরু করেছে। প্রার্থীরা শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিশ্রুতি ও নানা কর্মসূচি তুলে ধরছেন। ফলে ভোটারদের উপস্থিতি এবার উল্লেখযোগ্য হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, ভোটগ্রহণে কোনো প্রকার অনিয়ম হলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য গঠিত টিম নিয়মিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে। সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচনের স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যাতে ভয়ভীতি ছাড়াই নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, সেটি নিশ্চিত করাই মূল লক্ষ্য বলে জানানো হয়েছে।
এদিকে ভোটের দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ চলাফেরায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকতে পারে। ভোটকেন্দ্রের আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। শুধুমাত্র ভোটার, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নিরাপত্তা কর্মীরা সেখানে অবস্থান করতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, তারা যেন শৃঙ্খলা বজায় রেখে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করেন। নির্বাচন কমিশন বলছে, এই নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধিত্বকারী নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার সুযোগ পাবেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা ও নীতিনির্ধারণে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ডাকসু নির্বাচন শুধু ছাত্র রাজনীতিতেই নয়, বরং দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অতীতেও দেখা গেছে, ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে উঠে আসা নেতৃত্ব জাতীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তাই এই নির্বাচনকে ঘিরে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলেও ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
চারটি নতুন সিদ্ধান্ত ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্পষ্ট করেছে যে তারা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করতে বদ্ধপরিকর। এখন অপেক্ষা কেবল ভোটগ্রহণের দিন শিক্ষার্থীরা কতটা সক্রিয়ভাবে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় তা দেখার।
আগামী দিনে এই নির্বাচনের ফলাফল ঢাকার রাজনীতির চিত্রেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তাদের মূল লক্ষ্য হলো ক্যাম্পাসে একটি শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করা।
repoter




