ছবি: ছবি: সংগৃহীত
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাজনৈতিক ঐক্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর অবস্থানের পরামর্শ
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ বুধবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ১৩টি রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে তিনি বলেন, বছর না যেতেই পরাজিত শক্তির ষড়যন্ত্রের লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐক্য আরও সুদৃঢ় করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বৈঠকে অংশ নেয়া নেতাদের মধ্যে ছিলেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সৈয়দ হাসিবউদ্দিন হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এবি পার্টির মজিবুর রহমান, নাগরিক ঐক্যের শহীদুল্লাহ কায়সার, গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) রেদোয়ান আহমেদ, খেলাফত মজলিসের আহমদ আবদুল কাদের, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির তানিয়া রব, ১২-দলীয় জোটের শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বজলুর রশীদ ফিরোজ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) রুহিন হোসেন প্রিন্স এবং গণফোরামের মিজানুর রহমান।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সব রাজনৈতিক দলকে একত্রে নিয়ে অতীতের ঘটনাকে স্মরণ করা এবং রাজনৈতিক ঐক্যকে শক্তিশালী করা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে মতপার্থক্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা আমাদের ঐক্যের চিত্রকে দুর্বল করেছে, যার সুযোগ নিচ্ছে ফ্যাসিবাদী শক্তিগুলো।”
তিনি আরও বলেন, “যদিও রাজনৈতিক বিভাজন স্বাভাবিক, তবুও এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন সম্মিলিতভাবে একটি স্বচ্ছ বার্তা দেওয়া—আমরা কেউ একা নই এবং কেউ নিঃসঙ্গভাবে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে না। যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ না হই, তবে ওরা এটিকে দুর্বলতা হিসেবে বিবেচনা করবে।”
বৈঠকে উপস্থিত দলগুলো ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ঐক্য ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অব্যাহত ধারাবাহিকতার পক্ষে মত দেন। তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হতে হবে, যেন নাশকতা কিংবা ষড়যন্ত্র দমন করা সম্ভব হয়।
নেতারা সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং বলেন, একটি স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি এখনই শুরু করা দরকার। তারা ফ্যাসিবাদ প্রতিহত এবং গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নিয়মিত সর্বদলীয় সভা আয়োজনের আহ্বান জানান।
বৈঠকে এই সম্মিলিত মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়, অদূর ভবিষ্যতে আবারও বৃহত্তর রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে জাতীয় নির্বাচনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় ইস্যুতে দলগুলো একসঙ্গে কাজ করবে। পাশাপাশি, বিভিন্ন জেলায় ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কর্মসূচি চালু করারও পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “আজকের আলোচনা প্রমাণ করে, মতের ভিন্নতা থাকলেও বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক শক্তিগুলো একত্রিত হতে প্রস্তুত। আমরা চাই, রাজনীতি হোক দেশের কল্যাণে, ক্ষমতার দখল নয় বরং জনগণের সেবায় প্রতিযোগিতা হোক। এই সংকল্প নিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো।”
বৈঠকের মাধ্যমে দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা জাতির কাছে পৌঁছেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। নেতারা আশা প্রকাশ করেন, এই ঐক্য ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
repoter




