ছবি: ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামে সংঘর্ষে নিহত অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের জানাজা ঘিরে মানুষের ঢল নেমেছে। বুধবার (২৭ নভেম্বর) নগরীর কোর্ট বিল্ডিং চত্বর ও জমিয়তুল ফালাহ প্রাঙ্গণে তার দু’দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় আইনজীবী, রাজনীতিক, এবং সাধারণ মানুষের বিশাল উপস্থিতি ছিল। সকলে তার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার এবং ইসকন নিষিদ্ধের দাবি তোলেন।
সকাল সাড়ে ১০টায় কোর্ট বিল্ডিং চত্বরে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সাড়ে ১১টায় জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টায় লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ফারেঙ্গা গ্রামে তৃতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
সকাল থেকেই কোর্ট বিল্ডিং চত্বর এবং জমিয়তুল ফালাহ প্রাঙ্গণে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসতে শুরু করে। ট্রাক ও বাসে করে জেলা ও উপজেলা থেকে অনেককেই যোগ দিতে দেখা যায়। জমিয়তুল ফালাহ ময়দানে দ্বিতীয় জানাজার সময় মানুষের জনস্রোত পুরো মাঠজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।
জানাজায় অংশ নেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, এবং চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর শাহজাহান চৌধুরী। এছাড়া ঢাকা থেকে আসেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।
অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি
প্রথম জানাজায় জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামের হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়। সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, "আমাদের প্রিয় সহকর্মী আলিফকে ইসকন সন্ত্রাসীরা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। আমরা তার খুনিদের চিহ্নিত করে দ্রুত ফাঁসির দাবি জানাচ্ছি।"
তিনি আরও বলেন, "আদালত প্রাঙ্গণে গতকাল আসামিদের প্রিজন ভ্যান ঘেরাও করে যে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড হয়েছে, আমরা তারও নিন্দা জানাই। আইনজীবী সমিতি এই হত্যার বিচারে জিরো টলারেন্স নীতিতে থাকবে।"
অপরাধীদের পক্ষে কোনো আইনজীবী লড়বেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি জানান, "এ বিষয়ে আলোচনা করে আমাদের ভূমিকা নির্ধারণ করা হবে।"
জানাজার সময় আইনজীবী ও নেতারা ইসকনের বিভিন্ন উস্কানিমূলক কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে তাদের নিষিদ্ধের দাবি জানান। চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর শাহজাহান চৌধুরী বলেন, "গত ১৫ দিন ধরে আমরা প্রশাসনকে বলেছিলাম, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস এবং তার অনুসারীদের কার্যক্রম বন্ধ করা হোক। তারা উস্কানিমূলক সমাবেশ করেছে, কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।"
মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রামে চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর অনুসারীদের সঙ্গে আইনজীবীদের সংঘর্ষে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফ নৃশংসভাবে খুন হন। তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
৩৫ বছর বয়সী সাইফুল চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকার বাসিন্দা। তিনি ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য হন এবং পরে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধিত হন।
নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার আইনজীবী সমিতি কর্মবিরতি পালন করেছে। জানাজার পর তারা বার অ্যাসোসিয়েশনে বসে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
সাইফুল ইসলামের শেষ জানাজা বিকেল ৪টায় তার গ্রামের বাড়িতে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
repoter