ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০২:২৫ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

চট্টগ্রামে মাদক পুনর্বাসনে ‘সেফগার্ডিং’ বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

repoter

প্রকাশিত: ০৭:৪৯:০৮অপরাহ্ন , ১৭ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ০৭:৪৯:০৮অপরাহ্ন , ১৭ আগস্ট ২০২৫

-সংগৃহীত ছবি

ছবি: -সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত হলো ‘সেফগার্ডিং’ বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালা। বাংলাদেশ মাদকাসক্ত চিকিৎসা সহায়তা ও পুনর্বাসন কেন্দ্র (বারাকা)-এর উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মশালা রবিবার অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম অঞ্চলের কারিতাস কনফারেন্স রুমে। কর্মশালায় মাদকাসক্ত চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কার্যক্রমে নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়।

কর্মশালার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো দক্ষিণের উপপরিচালক হুমায়ুন কবির খন্দকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের চট্টগ্রাম বিশেষ প্রতিনিধি ও ডেপুটি চিফ মুহাম্মদ সেলিম। সভাপতিত্ব করেন কারিতাস চট্টগ্রাম অঞ্চলের আঞ্চলিক পরিচালক মার্সেল রতন গুদা এবং পুরো কর্মশালাটি পরিচালনা করেন বারাকার পরিচালক ব্রাদার অ্যাডভোকেট নির্মল ফ্রান্সিস গোমেজ সিএসসি। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বারাকার নেটওয়ার্ক অফিসার শাহরিয়ার শিমুল।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হুমায়ুন কবির খন্দকার বলেন, মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নের জন্য নিরাপদ পরিবেশ অপরিহার্য। তিনি মনে করেন, সঠিকভাবে চিকিৎসা দিতে হলে রোগীদের মানসিক স্বস্তি ও শারীরিক নিরাপত্তা সর্বাগ্রে নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে তিনি বারাকার এই উদ্যোগকে সময়োপযোগী হিসেবে উল্লেখ করেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কর্মসূচিতে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

বিশেষ অতিথি মুহাম্মদ সেলিম বলেন, মাদক সমস্যার সমাধান শুধুমাত্র আইন প্রয়োগের মাধ্যমে সম্ভব নয়, এর জন্য সামাজিক সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। তিনি লেখক, সাংবাদিক ও শিক্ষকদের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, সমাজের বিভিন্ন স্তরে মাদকবিরোধী প্রচারণা চালাতে হবে, যেন তরুণ প্রজন্ম এ সমস্যার বাইরে থাকতে পারে।

কর্মশালার আলোচনায় বক্তারা উল্লেখ করেন, বর্তমানে মাদকাসক্তি বাংলাদেশের অন্যতম সামাজিক সংকট। তরুণ সমাজকে এ অন্ধকার পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে একযোগে কাজ করতে হবে। মাদকাসক্তদের চিকিৎসার পাশাপাশি পুনর্বাসনের জন্য নিরাপদ ও সহায়ক পরিবেশ তৈরি করাই হতে পারে সর্বোত্তম সমাধান।

সভাপতি মার্সেল রতন গুদা বলেন, মাদক সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হলে আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। তিনি কারিতাসের পক্ষ থেকে বারাকার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং এ ধরনের কর্মশালা নিয়মিত আয়োজনের উপর গুরুত্ব দেন।

ব্রাদার অ্যাডভোকেট নির্মল ফ্রান্সিস গোমেজ সিএসসি তার বক্তব্যে বলেন, সেফগার্ডিং শুধু একটি প্রশিক্ষণ বা নির্দেশনা নয়, বরং এটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর টেকসই কার্যক্রমের অন্যতম ভিত্তি। এর মাধ্যমে চিকিৎসা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মর্যাদা, অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।

কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকার বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্রের প্রতিনিধি, শিক্ষক, সাংবাদিক এবং কারিতাসের কর্মকর্তারা। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বারাকা-ডিআইসি’র প্রজেক্ট ইনচার্জ অতনু বড়ুয়া অন্তু এবং বারাকা ফিমেল ডিআইসি’র সহকারী মাঠকর্মকর্তা আবুল বাশার হীরা।

শিক্ষক প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে বলেন, বিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। তারা মনে করেন, কিশোর বয়স থেকেই তরুণদেরকে মাদকবিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত করা গেলে মাদকের প্রতি কৌতূহল ও আসক্তি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।

সাংবাদিক প্রতিনিধিরা জানান, গণমাধ্যমকে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায় মাদকবিরোধী প্রচারণায়। সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের পাশাপাশি অনলাইন মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তারা এ ধরনের কর্মশালা থেকে পাওয়া জ্ঞান জনসচেতনতায় কাজে লাগানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

মাদক নিরাময় কেন্দ্রের প্রতিনিধিরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জানান, চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। রোগীদের শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যথাযথ প্রশিক্ষণ এবং অবকাঠামোগত সুবিধা অপরিহার্য। তারা আশা প্রকাশ করেন, বারাকার এই সেফগার্ডিং কর্মশালা তাদের জন্য দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।

কর্মশালায় আলোচিত হয়, মাদকাসক্তি কেবল একজন ব্যক্তির সমস্যা নয়, এটি একটি পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় সমস্যায় পরিণত হয়। তাই পুনর্বাসন কার্যক্রমকে টেকসই করার জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি কর্মসংস্থান, কাউন্সেলিং এবং পরিবারভিত্তিক সহায়তা জরুরি। বক্তারা বলেন, শুধুমাত্র মাদকাসক্তকে চিকিৎসা দিয়ে আবার তাকে সমাজে ফিরিয়ে দিলে চলবে না, বরং সমাজকে তাকে গ্রহণ করার জন্যও প্রস্তুত থাকতে হবে।

এছাড়া কর্মশালায় বিশেষভাবে আলোচনা হয় কিভাবে একটি সেফগার্ডিং ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা যায়। বক্তারা প্রস্তাব করেন, প্রতিটি নিরাময় কেন্দ্রে একটি বিশেষ সেফগার্ডিং কমিটি গঠন করা যেতে পারে, যেখানে চিকিৎসক, সমাজকর্মী, শিক্ষক এবং স্থানীয় প্রতিনিধিরা যুক্ত থাকবেন। এই কমিটি রোগীদের অধিকার রক্ষা, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং যেকোনো অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তিতে ভূমিকা রাখবে।

বারাকার কর্মকর্তারা জানান, প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার সেফগার্ডিং বিষয়ক কর্মশালা আয়োজন করা হলো। তারা আশা প্রকাশ করেন, এ কর্মশালা থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা দেশের অন্যান্য নিরাময় কেন্দ্রেও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে।

কর্মশালার সমাপনী বক্তব্যে হুমায়ুন কবির খন্দকার পুনর্ব্যক্ত করেন, সরকার মাদকবিরোধী কার্যক্রমে সর্বদা আন্তরিক। তবে মাদক সমস্যার সমাধান কেবল সরকারি উদ্যোগের ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং সমাজের প্রতিটি মানুষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এটি সম্ভব। তিনি বারাকা এবং কারিতাসের এ উদ্যোগকে প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর জন্য আরও সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

কর্মশালাটি প্রায় সারাদিনব্যাপী চলে এবং অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতা ও প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। কর্মশালার আলোচনার ভিত্তিতে একটি সুপারিশমালা প্রণয়ন করা হয়, যা ভবিষ্যতে মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর জন্য কার্যকর নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করবে বলে আয়োজকরা আশা প্রকাশ করেন।

repoter