ছবি: চট্টগ্রামের টাইগার পাস মোড়ে অনুষ্ঠিক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম | ফাইল ছবি
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার এবং বিচার দাবিতে আজ বুধবার (২৭ নভেম্বর) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। এ সময় আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ইসকন) নিষিদ্ধ করার দাবি তোলা হয়, যাদের বিরুদ্ধে উগ্রবাদ ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।
সকালে চট্টগ্রামের জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদে সাইফুল ইসলামের দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে টাইগার পাস মোড়ে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম। সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
হাসনাত আবদুল্লাহ: ‘উগ্রবাদীদের জায়গা হবে না’
বিক্ষোভে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, “আমার ভাই সাইফুলকে যারা হত্যা করেছে, তাদের দ্রুত বিচার করতে হবে। আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতার দাবি করছি। একই সঙ্গে ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে উগ্রবাদ ছড়াচ্ছে, যা বাংলাদেশে সহ্য করা হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ সব ধর্মের মানুষের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করে। কিন্তু কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যদি ধর্মের নাম ব্যবহার করে সহিংসতা বা উগ্রবাদ ছড়ানোর চেষ্টা করে, তাদের কোনো জায়গা এই দেশে হবে না।”
দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়ে তিনি বলেন, “৫ আগস্টের পর থেকে কোনো মন্দির ভাঙা হয়নি বা হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল করা হয়নি। বরং মুসলিম ভাইয়েরাই মন্দির পাহারা দিয়েছে। অথচ বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশকে অশান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা স্পষ্ট বলে দিতে চাই, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের কোনো জায়গা বাংলাদেশে থাকবে না।”
সারজিস আলম: ‘ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করা হবে’
জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, “বাংলাদেশের মুসলিমরা শান্তিপ্রিয় ও উদার। তারা সব ধর্মের মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু এ সহানুভূতিকে যারা ষড়যন্ত্রের হাতিয়ার বানাবে, তাদের কোনো ছাড় দেয়া হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা অনেক উদারতা দেখিয়েছি। এখন সময় এসেছে উগ্রপন্থীদের প্রতিহত করার। পুরো বাংলাদেশ এখন একসঙ্গে দাঁড়াবে, কোনো ষড়যন্ত্র সফল হতে দেয়া হবে না।”
সমাবেশে ইসকন নিষিদ্ধের দাবি
বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ইসকনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, “ইসকন উগ্রবাদ ছড়ানোর কাজে লিপ্ত। তারা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্র করছে।” বক্তারা ইসকনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি জানান এবং সরকারের প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান।
পাশাপাশি সরকারের দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান
বিক্ষোভকারীরা আইনজীবী হত্যার ঘটনায় দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানান। তাদের দাবি, অপরাধীদের বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
উপসংহার
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামের হত্যাকাণ্ড শুধু তার পরিবারকেই শোকের সাগরে ডুবিয়েছে তা নয়, বরং এটি দেশের শান্তিপ্রিয় মানুষের মাঝে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিক্ষোভে ওঠা দাবিগুলো সরকারের কাছে কঠোর বার্তা বহন করে। এখন দেখার বিষয়, সরকার এই হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
repoter