ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০২:২৫ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

চবি এলাকায় মাইক নিয়ে পাল্টাপাল্টি ঘোষণা, সংঘর্ষে স্থগিত সব পরীক্ষা

repoter

প্রকাশিত: ০৭:২২:১২অপরাহ্ন , ৩১ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ০৭:২২:১২অপরাহ্ন , ৩১ আগস্ট ২০২৫

-সংগৃহীত ছবি

ছবি: -সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রবিবার (৩১ আগস্ট) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আজকের নির্ধারিত পরীক্ষাগুলো নেওয়া হচ্ছে না। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে নতুন তারিখ পরে জানানো হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, শনিবার গভীর রাতে ঘটে যাওয়া ঘটনার পর থেকে ক্যাম্পাস ও আশপাশের এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। রাত দেড়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নারী শিক্ষার্থীকে একটি ভাড়া বাসার দারোয়ান মারধর করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যখন স্থানীয়রা মসজিদের মাইক ব্যবহার করে লোকজনকে ডাকেন এবং পাল্টা হিসেবে শিক্ষার্থীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের হল মসজিদের মাইক ব্যবহার করে সমবেত হন। ফলে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে এবং পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, দর্শন বিভাগের ২০২৪–২৫ শিক্ষাবর্ষের ওই নারী শিক্ষার্থী ২ নম্বর গেটের মাছ বাজার এলাকার শাহাবুদ্দিনের বাসায় ভাড়া থাকতেন। শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি বাসায় প্রবেশ করতে গেলে দারোয়ানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে দারোয়ান তাঁকে শারীরিকভাবে আঘাত করেন। পরে তিনি মোবাইলে এক বন্ধুকে ঘটনাটি জানান। এর পরপরই কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে পৌঁছে দারোয়ানকে খুঁজতে শুরু করেন। এসময় স্থানীয়দের সঙ্গে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে পরিস্থিতি সংঘর্ষে রূপ নেয়।

সংঘর্ষ চলাকালে দুই পক্ষই একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে এবং মুহূর্তেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দিয়ে লোকজনকে জড়ো করেন। অন্যদিকে চবির সোহরাওয়ার্দী হল মসজিদ থেকেও শিক্ষার্থীরা মাইক ব্যবহার করে ডাকতে শুরু করেন। ফলে রাতভর উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলে। এ ঘটনায় অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, শনিবার রাতের ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ফ্ল্যাটে আটকে পড়েছিলেন। যারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন, তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জরুরি বৈঠক করছে। এ বৈঠকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি যেমন চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের ডাকা হয়েছে। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই এবং এনএসআইকেও পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ ঘটনার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ও হাটহাজারী এলাকার পরিবেশ থমথমে হয়ে উঠেছে। শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে হলে ফিরে যাচ্ছেন, অনেকেই আবার এলাকায় বের হতে সাহস পাচ্ছেন না। স্থানীয় দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও আংশিকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা মনে করছেন, ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়–স্থানীয় সম্পর্কের টানাপোড়েনকে আরও প্রকট করে তুলেছে। অতীতে এমন ঘটনার নজির থাকলেও এবার মসজিদের মাইক ব্যবহার করে উভয় পক্ষকে জড়ো করার বিষয়টি পরিস্থিতিকে জটিল করেছে। এতে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, স্থানীয় সাধারণ মানুষও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব। একইসঙ্গে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা জরুরি। তাদের মতে, প্রশাসন ও স্থানীয় প্রতিনিধিদের একসঙ্গে বসে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে, অন্যথায় ভবিষ্যতেও এ ধরনের সংঘাত ঘটতে পারে।

এদিকে পরীক্ষার স্থগিত হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, দীর্ঘ প্রস্তুতির পর পরীক্ষার ঠিক দিনেই এমন সিদ্ধান্ত হতাশাজনক। তবে তাদের অনেকে এটিও মেনে নিয়েছেন যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয় এবং নিরাপত্তা আগে বিবেচনায় নিতে হবে।

স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক অঙ্গন থেকেও প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। কেউ কেউ প্রশাসনের পদক্ষেপকে সময়োপযোগী বললেও অনেকে মনে করেন, কেবল স্থগিত ঘোষণা দিয়েই সমস্যার সমাধান হবে না। শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে হলে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজতে হবে।

অতীতে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে উত্তেজনা একাধিকবার সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। কিন্তু এবারের ঘটনাটি ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে কারণ এতে ধর্মীয় স্থাপনার মাইক ব্যবহৃত হয়েছে, যা দুই পক্ষকেই আরও দ্রুত সমবেত করেছে এবং পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আশা করছে, আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। তবে আপাতত সব ধরনের পরীক্ষা স্থগিত রেখে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সবাই এখন তাকিয়ে আছেন প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপ ও আলোচনার ফলাফলের দিকে।

repoter