
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। সরবরাহ বৃদ্ধির কারণে সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। একই সঙ্গে ব্রয়লার মুরগির দামও কমতির দিকে। ডিমের দামও কিছুটা কমে বর্তমানে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে চালের দাম এখনো উচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। অন্যদিকে, আলুসহ বিভিন্ন সবজির দাম কমার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
শুক্রবার রাজধানীর শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও তালতলা ও মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। বিক্রেতাদের মতে, গত দুই সপ্তাহ ধরে ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম কমতির দিকে রয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ২০০-২১০ টাকা। পরে সাত-আট দিন আগে দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে যায়। গতকাল তা আরও ১০ টাকা কমে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ, দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ২০ টাকা কমেছে।
অন্যদিকে, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি সোনালির দাম ছিল ৩০০-৩৩০ টাকা, যা গতকাল ২৮০-৩১০ টাকায় নেমে এসেছে। ফলে সোনালি মুরগির দামও কেজিতে ২০ টাকা কমেছে। তবে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারভেদে এক ডজন ডিমের দাম ১২৫-১৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে, তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে দাম আরও ৫-১০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে।
বাজারে এখন প্রধানত দেশি নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে আমদানি করা পেঁয়াজ পাওয়া গেলেও দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ বেশি থাকায় দাম তুলনামূলকভাবে কম রয়েছে। খুচরা পর্যায়ে এক কেজি পেঁয়াজ ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গত সপ্তাহেও একই ছিল। তবে কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতারা জানান, গত দুই দিনে পাইকারি পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম ২-৩ টাকা বেড়েছে, যদিও এর প্রভাব খুচরায় এখনো পড়েনি।
মসলা পণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি রসুন ২৩০-২৪০ টাকা, আমদানি করা আদা ২৩০-২৪০ টাকা ও দেশি আদা ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আলুর দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বাজারভেদে এক কেজি আলু ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহ আগে ২৫-৩০ টাকা ছিল। অর্থাৎ, এক সপ্তাহের ব্যবধানে আলুর দাম কেজিতে পাঁচ টাকা কমেছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুসারে, গত এক মাসের ব্যবধানে আলুর দাম প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। গত বছরের তুলনায়ও আলুর দাম এখন কম।
তবে চালের বাজারে কোনো পরিবর্তন হয়নি। মাসখানেক আগে চালের দাম কেজিতে পাঁচ থেকে আট টাকা বেড়েছিল। পরে সরকার চালের শুল্ক কমানো এবং আমদানি করার অনুমতি দিলেও দাম কমেনি। ধানের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় চালকল মালিকেরা চালের দাম বাড়িয়ে রেখেছেন। ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজি মিনিকেট ও নাজিরশাইল চাল ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি মোটা চাল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা এবং মাঝারি ধরনের ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ চাল ৬০-৬৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
শীতের মৌসুম থাকায় সবজির বাজার তুলনামূলকভাবে কম দামে রয়েছে। তিন-চার সপ্তাহ ধরে বাজারে সবজির সরবরাহ ভালো থাকায় দাম কমতির দিকে। বর্তমানে শীতের সবজির মধ্যে টমেটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রকলি, শালগম, মুলার চাহিদা বেশি। গতকাল বাজারভেদে প্রতিটি ফুলকপি ১৫-২০ টাকা, বাঁধাকপি ও ব্রকলি ২৫-৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিকেজি মুলা ২০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া, শালগম ও পেঁয়াজ কলি ৩০-৩৫ টাকা, শিম ২০-৪০ টাকা, শসা, বেগুন, টমেটো ও লাউ ৩০-৬০ টাকা, পেঁপে ৪০-৫০ টাকা এবং কাঁচামরিচ ৪০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
তবে মাছ-মাংসের দামে কোনো উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যায়নি। প্রতি কেজি চাষকৃত কই ২৮০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ টাকা, পাঙাশ ২২০ টাকা, রুই ৩৫০-৩৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া এক কেজি আকারের ইলিশ ২৭০০-২৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমলেও চালের বাজার এখনো ভোক্তাদের জন্য স্বস্তির জায়গা হয়ে উঠেনি। যদিও আলু, পেঁয়াজ ও শীতের সবজির দাম কমায় সাধারণ ক্রেতারা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন, তবে চালের উচ্চমূল্য এখনও তাদের কষ্ট বাড়িয়ে তুলছে।
repoter