ছবি: -সংগৃহীত ছবি
বিশ্বব্যাপী বাজারে অ্যাপলের নতুন স্মার্টফোন আইফোন ১৭ এর উন্মোচন ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। প্রাথমিক অর্ডারের চাপ সামলাতে প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে বেসিক সংস্করণের উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শনিবার আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি খাতের সংবাদ মাধ্যম দ্য ইনফরমেশন-এর তথ্য অনুযায়ী অ্যাপল অন্তত ৩০ শতাংশ পর্যন্ত উৎপাদন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ধারণার তুলনায় অনেক বেশি ক্রেতা এবার ৭৯৯ মার্কিন ডলারের বেসিক মডেল বেছে নিচ্ছেন। সাধারণত অ্যাপলের গ্রাহকদের প্রিমিয়াম প্রো সংস্করণের প্রতি আকর্ষণ বেশি থাকলেও, এবার দৃশ্যপট বদলেছে। গ্রাহক চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন বাড়াতে চীনের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লাক্সশেয়ারকে প্রতিদিনের উৎপাদন প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে বলা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাপল এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
বিশ্লেষকদের মতে, আইফোন ১৭ সিরিজে নতুন যুক্ত হওয়া ‘আইফোন এয়ার’ নামের অতিপাতলা সংস্করণ বিক্রির গতি বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। গত কয়েক বছর ধরে বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন বিক্রি স্থবির হয়ে পড়েছিল। ক্রমাগত নতুন সংস্করণ বাজারে এলেও বড় ধরনের পরিবর্তন না থাকায় ক্রেতারা অনেক সময় আপগ্রেড করতে আগ্রহ হারাচ্ছিলেন। এই প্রেক্ষাপটে আইফোন ১৭-তে যুক্ত হওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ আপডেট বাজারে নতুন প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আইফোন ১৭-এর বেসিক সংস্করণে যে পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে, সেগুলো আগে শুধুমাত্র প্রো সংস্করণেই পাওয়া যেত। উন্নতমানের ডিসপ্লে ও ক্যামেরা প্রযুক্তি এতে যুক্ত হওয়ায় বেসিক মডেল ও প্রো মডেলের মধ্যে পার্থক্য অনেকটা কমে এসেছে। ফলে যারা তুলনামূলক কম দামে উন্নত ফিচার পেতে চান, তাদের কাছে এন্ট্রি-লেভেল আইফোন এবার বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে।
প্রযুক্তি বাজারে দীর্ঘদিন ধরে অ্যাপলের একটি কৌশল ছিল গ্রাহকদের প্রিমিয়াম ডিভাইসের দিকে আকৃষ্ট করা। এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি রাজস্ব ও মুনাফা বাড়িয়ে তুলত। তবে বর্তমানে বৈশ্বিক বাজারে ক্রেতাদের একটি বড় অংশ দামের ব্যাপারে আগের চেয়ে বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটি আগের নীতি থেকে সরে এসে বেসিক মডেলের উৎপাদন বাড়াতে বাধ্য হয়েছে।
অ্যাপলের এই পরিবর্তন নিয়ে প্রযুক্তি খাতের পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এটি বাজারে একটি নতুন ধারা তৈরি করতে পারে। শুধুমাত্র প্রিমিয়াম আপগ্রেডের ওপর নির্ভর করে ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। মধ্যম দামের ডিভাইসগুলোতে উন্নত ফিচার সংযোজনের মাধ্যমে অ্যাপল হয়তো নতুন গ্রাহক শ্রেণিকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদে এই কৌশল কতটা টেকসই হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।
বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন বাজারে প্রতিযোগিতা দিন দিন বাড়ছে। স্যামসাং, শাওমি, অপো ও ভিভোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ইতিমধ্যে কম দামের মডেলে উন্নত ফিচার যুক্ত করে বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছে। এ অবস্থায় অ্যাপলের জন্য বেসিক মডেলের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ একটি ইতিবাচক দিক হলেও, প্রতিষ্ঠানটির ঐতিহ্যবাহী প্রিমিয়াম কৌশল নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে।
বর্তমানে অ্যাপলের সামনে দুটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। প্রথমত, গ্রাহকেরা যাতে নতুন মডেলগুলিকে মূল্যবান বলে মনে করেন তা নিশ্চিত করা, এবং দ্বিতীয়ত, প্রিমিয়াম মডেলগুলির বিক্রি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কারণ বেসিক মডেলের বিক্রি বাড়লে তা প্রো মডেলের বাজারকে আংশিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। তাই প্রতিষ্ঠানটি উভয় ক্ষেত্রেই ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
সব মিলিয়ে, আইফোন ১৭ সিরিজ বিশ্ববাজারে অ্যাপলের জন্য একটি নতুন মোড় তৈরি করেছে। বেসিক সংস্করণের প্রতি অতিরিক্ত চাহিদা প্রতিষ্ঠানটির কৌশলে পরিবর্তন আনতে বাধ্য করছে। বাজারে প্রতিযোগিতা ও ক্রেতাদের আচরণে আসা এই পরিবর্তন আগামী দিনে অ্যাপলের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।
repoter




