ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০২:০৯ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

বিক্ষুব্ধ জনতার হামলার মুখে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই

repoter

প্রকাশিত: ০৬:৫২:১৪অপরাহ্ন , ২৮ আগস্ট ২০২৫

আপডেট: ০৬:৫২:১৪অপরাহ্ন , ২৮ আগস্ট ২০২৫

-সংগৃহীত ছবি

ছবি: -সংগৃহীত ছবি

আর্জেন্টিনার রাজনীতি আবারও উত্তেজনাপূর্ণ রূপ নিল রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রেসিডেন্ট হাভিয়ের মিলেই বিক্ষুব্ধ জনতার তীব্র প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়েন। বুধবার এক প্রচার সমাবেশে অংশ নিতে গিয়ে তাঁর দিকে ইট-পাটকেল, পাথর এবং বোতলসহ নানা বস্তু ছুড়ে মারে উত্তেজিত জনতা। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যে, পরিস্থিতি এত দ্রুত অবনতি ঘটে যে কয়েক মিনিটের মধ্যেই পুরো সমাবেশ অরাজকতায় রূপ নেয়। এতে প্রেসিডেন্ট মিলেই শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন বলে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে।

প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন মিলেইয়ের বোন ও তাঁর ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহযোগী কারিনা মিলেই, যিনি সম্প্রতি ব্যাপক সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। দলের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গেও প্রেসিডেন্ট সেখানে উপস্থিত ছিলেন। প্রচারণার শুরুতে পরিবেশ শান্ত থাকলেও হঠাৎ করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। জনতার একাংশ প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করে স্লোগান দিতে শুরু করে এবং মুহূর্তের মধ্যে তা সহিংসতায় রূপ নেয়। অনেকে ভাঙচুর চালায় এবং মিলেই ও তাঁর দলের উদ্দেশে বিভিন্ন বস্তু নিক্ষেপ করতে থাকে। দ্রুত নিরাপত্তা রক্ষীরা তাঁকে ঘিরে ফেলে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় প্রেসিডেন্টকে গাড়িতে তুলে দ্রুত স্থান ত্যাগ করানো হয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে প্রেসিডেন্ট মিলেইয়ের জনপ্রিয়তায় ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। শুরুতে তিনি অর্থনৈতিক সংস্কার এবং ভিন্নধর্মী নেতৃত্বের কারণে জনসাধারণের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও, সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারিগুলো তাঁর ভাবমূর্তিকে গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। বিশেষ করে ঘুষ কেলেঙ্কারি নিয়ে আর্জেন্টিনায় সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক ক্ষোভ ও বিতর্ক। অভিযোগ রয়েছে যে, এই কেলেঙ্কারিতে প্রেসিডেন্টের বোন কারিনা মিলেই প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এমন অভিযোগ রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই আক্রমণের ঘটনায়।

বুয়েন্স আয়ার্স পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাস্থলে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকলেও পরিস্থিতি এত হঠাৎ করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় তা সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আক্রমণকারীদের মধ্যে অনেকেই আগে থেকেই পরিকল্পিতভাবে সেখানে উপস্থিত ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। কয়েকজনকে আটক করা হলেও তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। পুলিশ বলছে, প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা ভেদ করে হামলার চেষ্টা কতটা পরিকল্পিত ছিল, তা খতিয়ে দেখা হবে।

স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে আর্জেন্টিনায় রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়েছে। অর্থনৈতিক সংকট, বেকারত্ব বৃদ্ধি, এবং দুর্নীতির অভিযোগে সাধারণ মানুষের অসন্তোষ ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠছে। প্রেসিডেন্ট মিলেই ক্ষমতায় এসেছিলেন বড় ধরনের সংস্কারের অঙ্গীকার নিয়ে। তিনি রাষ্ট্রীয় ব্যয় কমানো, দুর্নীতি দমন এবং প্রশাসনিক সংস্কারের কথা বলেছিলেন। তবে বাস্তব পরিস্থিতি সেই প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি বলে অভিযোগ উঠছে। বরং প্রশাসনের ভেতরকার দুর্নীতি ও আত্মীয়স্বজনের সম্পৃক্ততা সাধারণ মানুষের হতাশা আরও বাড়িয়েছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রেসিডেন্টের বোন কারিনা মিলেই-এর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ঘটনাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে। তিনি শুধু একজন রাজনৈতিক সহযোগী নন, বরং প্রেসিডেন্টের নিকটতম উপদেষ্টা হিসেবেও পরিচিত। তাঁর নাম জড়িয়ে পড়ায় জনমনে সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে, শাসক দলের ভেতরকার দুর্নীতি কতটা গভীর এবং তার দায়ভার প্রেসিডেন্ট নিজেও এড়িয়ে যেতে পারবেন না। এই ক্ষোভই নির্বাচনী প্রচারণার মাঠে সহিংস প্রতিক্রিয়ায় রূপ নিয়েছে।

এদিকে মিলেই প্রশাসন দাবি করেছে, এ ঘটনা ছিল একটি ষড়যন্ত্রমূলক আক্রমণ। সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে যে, বিরোধী দলের সমর্থকরাই পরিকল্পিতভাবে এই হামলার আয়োজন করেছিল, যাতে প্রেসিডেন্টকে বিব্রত করা যায় এবং নির্বাচনী প্রচারণা ভণ্ডুল করা যায়। যদিও বিরোধী নেতারা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, জনগণের ক্ষোভ সম্পূর্ণ স্বতঃস্ফূর্ত এবং এর জন্য দায়ী কেবল সরকারের ব্যর্থতা।

ঘটনার পরপরই আর্জেন্টিনার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হতে থাকে। অনেকে প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সমালোচকরা বলছেন, রাষ্ট্রপ্রধানকে এভাবে প্রকাশ্যে আক্রমণের শিকার হতে হওয়া শুধু রাজনৈতিক সংকটই নয়, বরং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ দুর্বলতাকেও তুলে ধরে। অনেকেই মনে করছেন, এটি আর্জেন্টিনার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য একটি অশনি সংকেত।

আগামী স্থানীয় ও মধ্যবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রেসিডেন্ট মিলেই ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি যেকোনো মূল্যে সংস্কারের পথেই এগিয়ে যাবেন। কিন্তু তাঁর প্রশাসনের প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা যে এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, তা এ ঘটনার পর আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

বুয়েন্স আয়ার্সের ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক আলোচনায় নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। সরকারপন্থি ও বিরোধী শিবির উভয়ই নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে মাঠে নেমেছে। তবে একটি বিষয় পরিষ্কার—আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন এক অনিশ্চিত মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রেসিডেন্ট মিলেইয়ের নেতৃত্ব জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হবে কি না, তা-ই এখন সবার কৌতূহলের বিষয়।

repoter