ছবি: ছবি: সংগৃহীত
মোট ১৪ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করল এনবিআর, চলমান আন্দোলনের মধ্যে নেওয়া হলো সিদ্ধান্ত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বদলি আদেশ অমান্য করে প্রকাশ্যে তা ছিঁড়ে ফেলার ঘটনার জেরে আরও ছয় কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। এর আগে একই কারণে আট কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় একদিনে এনবিআরের মোট ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ থেকে পৃথক পৃথক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই আদেশ জারি করা হয়।
বরখাস্ত হওয়া ছয় কর্মকর্তার মধ্যে রয়েছেন: কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, ঢাকা (উত্তর)-এর রাজস্ব কর্মকর্তা সবুজ মিয়া; কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, খুলনার রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল বশর; ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো প্রকল্প, ঢাকার উপ-প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত কমিশনার) সিফাত-ই-মরিয়ম; নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর, মূল্য সংযোজন কর, ঢাকার অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, যিনি এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন; এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মো. শাহাদাত জামিল এবং কর অঞ্চল-৮, ঢাকার অতিরিক্ত কর কমিশনার মির্জা আশিক রানা।
এর পাশাপাশি আরও আট কর্মকর্তা বরখাস্তের তালিকায় রয়েছেন: খুলনা কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম, রংপুর কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার নুশরাত জাহান শমী, কুমিল্লা কর অঞ্চলের উপ-কর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিল, ঢাকা কর অঞ্চল-২-এর যুগ্ম কর কমিশনার মাসুমা খাতুন, কর অঞ্চল-১৫-এর যুগ্ম কর কমিশনার মুরাদ আহমেদ, কুষ্টিয়া কর অঞ্চলের কর্মকর্তা মোরশেদ উদ্দীন খান, নোয়াখালী কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা এবং কক্সবাজার কর অঞ্চলের যুগ্ম কর কমিশনার আশরাফুল আলম প্রধান।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, প্রথমে আটজন কর্মকর্তাকে বরখাস্তের আদেশ জারি করা হয় আয়কর অনুবিভাগের অধীনে। পরে আলাদা আদেশে শুল্ক অনুবিভাগের পাঁচজন এবং কর অনুবিভাগের একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে একই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে চলমান এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যে। গত ২২ জুন আয়কর অনুবিভাগের পাঁচ কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়। সেই আদেশের বিরুদ্ধে ২৩ জুন সংবাদ সম্মেলন করেন এনবিআরের একটি অংশ। সেখানে বদলি আদেশকে ‘প্রতিহিংসামূলক ও নিপীড়নমূলক’ আখ্যা দিয়ে প্রকাশ্যে কাগজ ছিঁড়ে ফেলার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান তারা।
এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারি চাকরির বিধি অনুযায়ী কোনো সরকারি আদেশ প্রকাশ্যে অবমাননা বা অমান্য করা শৃঙ্খলা ভঙ্গের শামিল। সেই বিবেচনায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।
তবে বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের একাংশ দাবি করেছেন, তারা এনবিআরের সংস্কার ও স্বচ্ছতা আনয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে নেওয়া এই সিদ্ধান্ত অন্যায় ও একপক্ষীয়। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনিক মহলে আলোচনা চলছে।
এনবিআরের উচ্চপর্যায়ের একজন কর্মকর্তা জানান, চলমান পরিস্থিতিতে রাজস্ব আদায়ে যেন কোনো ব্যাঘাত না ঘটে, সে বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। পাশাপাশি আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগও নেওয়া হতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
সবশেষ খবরে জানা গেছে, বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এনবিআর সংশ্লিষ্ট মহলে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য এখনো দেওয়া হয়নি।
repoter




