ছবি: -সংগৃহীত ছবি
ঢাকা — সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে সবার অধিকার সমান এবং এই অধিকার কখনোই ধর্ম-বর্ণ, ভাষা কিংবা সম্প্রদায়ের ভেদাভেদ দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। তিনি উল্লেখ করেন, দেশটি যে চেতনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই চেতনা হলো সমতা, ভ্রাতৃত্ব ও সহাবস্থান। এই মূল্যবোধ থেকেই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে এবং ভবিষ্যতেও একই ধারা অব্যাহত থাকবে।
শনিবার রাজধানীতে জন্মাষ্টমীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধি, হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা এবং রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সেনাপ্রধানের বক্তব্যে উঠে আসে বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সামাজিক শান্তি এবং বহুত্ববাদী সংস্কৃতির দৃঢ় প্রতিশ্রুতি।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে কারও প্রতি বৈষম্য নেই। আমরা এমন একটি সমাজ গড়ে তুলতে চাই যেখানে প্রত্যেকেই তার নিজস্ব ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য চর্চা করতে পারবে অবাধে। আমাদের সংবিধান যেমন সবার সমান অধিকার নিশ্চিত করেছে, তেমনি রাষ্ট্রও সেই অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আরও বলেন, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বাংলাদেশের মানুষের অন্তর্নিহিত শক্তি। “আমরা অতীতে দেখেছি—সংকট কিংবা দুর্যোগের সময়ে মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পরস্পরের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটিই আমাদের আসল শক্তি। ভবিষ্যতেও আমরা এই ঐক্য ধরে রাখব।”
বাংলাদেশ একটি বহুধর্মী ও বহুসাংস্কৃতিক দেশ। এখানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানসহ নানা ধর্মের মানুষ যুগ যুগ ধরে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। জন্মাষ্টমী, দুর্গাপূজা, বুদ্ধ পূর্ণিমা কিংবা বড়দিনের মতো উৎসবগুলো শুধু একটি সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং সেগুলো সার্বজনীন আনন্দে রূপ নেয়। রাজধানীতে আয়োজিত জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান সেই চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “যখন আমরা বিভিন্ন উৎসব একসাথে পালন করি, তখন এটি প্রমাণ করে যে আমরা সবাই এক পরিবারের সদস্য। এই পরিবার হলো বাংলাদেশ। এখানে কাউকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই।’’
সেনাপ্রধান আরও উল্লেখ করেন, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণ স্থাপন করে আসছে। তবে বিভিন্ন সময়ে চ্যালেঞ্জ এসেছে, কিছু অপশক্তি বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। কিন্তু দেশের সাধারণ মানুষ সর্বদা শান্তি ও ঐক্যের পক্ষে থেকেছে। তিনি বলেন, “আমরা জানি, বিভেদ কখনো সমাজকে এগিয়ে নিতে পারে না। ঐক্যই আমাদের মূল শক্তি। তাই কোনো বিভেদ সৃষ্টির অপচেষ্টা কখনোই সফল হবে না।”
অনুষ্ঠানে বক্তারা বাংলাদেশের সংবিধান ও স্বাধীনতার ঘোষণার চেতনাকে স্মরণ করেন। তারা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা সবার জন্য নিশ্চিত থাকবে। সেনাপ্রধান তার বক্তব্যে সেই স্বপ্নকে পুনরায় তুলে ধরেন এবং বলেন, “বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করতে হলে আমাদের সমাজে বৈষম্য বা বিভেদ থাকা চলবে না। সকলেই সমান, সকলের অধিকার সমান।”
তিনি বিশেষভাবে তরুণ প্রজন্মকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। তরুণরা যদি সম্প্রীতির বার্তা ধারণ করে এগিয়ে আসে, তবে ভবিষ্যত বাংলাদেশ আরও সমতাপূর্ণ ও শান্তিপূর্ণ হয়ে উঠবে। তার মতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে—ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান, সবাই বন্ধু।
জন্মাষ্টমীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধানের বক্তব্যে আনন্দিত হয় উপস্থিত ভক্তবৃন্দ ও সংগঠনের নেতারা। তারা বলেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হয়, তখন তা সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে বারবার প্রমাণিত হয়েছে, এই দেশ বিভেদ নয়, ঐক্যের পথে চলে। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত প্রতিটি সংগ্রামে জাতি এক হয়ে লড়েছে। সেনাপ্রধান সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, “আমরা একসাথে সংগ্রাম করেছি, একসাথে রক্ত দিয়েছি, একসাথে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এখন আমাদের দায়িত্ব একসাথে দেশ গড়ে তোলা।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, বিশ্ব আজ নানা সংঘাত, বিভাজন ও বৈরিতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। অনেক দেশ ধর্ম-বর্ণের কারণে সহিংসতায় জর্জরিত। কিন্তু বাংলাদেশ সেই পথে হাঁটবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে শান্তি ও সম্প্রীতির পথে।
অনুষ্ঠান শেষে ভক্তরা মঙ্গল শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভক্তরা যেমন ছিলেন, তেমনি উপস্থিত ছিলেন অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও। এই দৃশ্যই প্রমাণ করে, উৎসব আসলে সবার, আনন্দও সবার।
সেনাপ্রধানের বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়, বাংলাদেশ রাষ্ট্র শুধু একটি ভৌগোলিক সত্তা নয়; এটি হলো বহুত্ববাদী সংস্কৃতির মিলনভূমি। এখানে সবাই সমান অধিকার ভোগ করে এবং ভবিষ্যতেও তা বজায় থাকবে।
তিনি শেষে বলেন, “আমাদের ঐতিহ্য হলো ভালোবাসা, মানবতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা। আমরা সেই ঐতিহ্য ধরে রাখব। বাংলাদেশ হবে এমন একটি দেশ যেখানে কোনো ভেদাভেদ থাকবে না, সবাই সমান অধিকার নিয়ে বসবাস করবে।"
repoter




