ছবি: -সংগৃহীত ছবি
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, বর্তমান সরকার দেশকে নারী-পুরুষ সমতায় বিশ্বাসী একটি নারীবান্ধব ও পরিবেশবান্ধব রাষ্ট্রে রূপান্তরের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। সমাজে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং তাদের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সোমবার রাজধানীর পল্টনে শহীদ (ক্যাপ্টেন) এম. মনসুর আলী জাতীয় হ্যান্ডবল স্টেডিয়ামে আয়োজিত ৩৬তম জাতীয় নারী হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা-২০২৫-এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, খেলাধুলা শুধুমাত্র বিনোদনের বিষয় নয়, এটি নারীর ক্ষমতায়ন, আত্মবিশ্বাস সঞ্চার ও নেতৃত্ব বিকাশের অন্যতম কার্যকর হাতিয়ার। একটি সমাজ বা রাষ্ট্রের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য, আর ক্রীড়াঙ্গন সেই অংশগ্রহণকে গতিশীল করে তোলে। তাই জাতীয় পর্যায়ে এবং স্থানীয় পর্যায়ে নারী খেলাধুলার কার্যক্রমকে আরও বিস্তৃত করতে হবে।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশে মেয়েরা আজ প্রতিটি ক্ষেত্রেই সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান কিংবা প্রশাসনিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গণেও তারা নিজেদের প্রতিভা ও সাফল্য দিয়ে দেশকে গর্বিত করছে। তিনি উল্লেখ করেন, বিশেষ করে মেয়েদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অর্জন কেবল ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি দেশের মর্যাদা ও ভাবমূর্তির প্রতিফলন।
তিনি সামাজিক বন্ধনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, সমাজে পারস্পরিক সম্পর্ক ও বন্ধনের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু ঢাকা শহরে মাঠের সংকটের কারণে এই সামাজিক বন্ধন ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। খেলাধুলা শুধু শরীরচর্চা বা প্রতিযোগিতা নয়, এটি একধরনের সামাজিক বিনির্মাণ প্রক্রিয়া। নারী হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা তার উজ্জ্বল উদাহরণ, যেখানে নারীরা কেবল খেলার জন্য মাঠে নামছে না, তারা তাদের সাহস, সক্ষমতা ও আত্মপ্রকাশের অধিকারকে সামনে নিয়ে আসছে।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা সবাইকে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে পলিথিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পরিবেশ সুরক্ষা কেবল সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব। খেলাধুলা যেমন সমাজকে একত্রিত করে, তেমনি পরিবেশ সচেতনতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে পারে।
নারীর ক্রীড়া অংশগ্রহণের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, নারীর সামাজিক অবস্থান সুদৃঢ় করতে, শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখতে এবং কর্মক্ষম থেকে জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশের পতাকা তুলে ধরতে মেয়েদের ভূমিকা অপরিসীম।
সমাপনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ হ্যান্ডবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন আহম্মেদ, সহ-সভাপতি ও জাতীয় প্রতিযোগিতা আয়োজন ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা কমিটির আহ্বায়ক ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, সদস্য-সচিব রাশিদা আফজালুন নেসা, ক্রীড়া সংগঠক, জাতীয় হ্যান্ডবল ফেডারেশনের কর্মকর্তা, খেলোয়াড়, কোচ এবং অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।
এবারের প্রতিযোগিতায় মোট ১৯টি দল অংশ নেয়। দীর্ঘ প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। রানার্স-আপ হয় বাংলাদেশ পুলিশ দল এবং তৃতীয় স্থান লাভ করে পঞ্চগড় জেলা দল।
সমাপনীতে বিজয়ী দলের খেলোয়াড়দের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধান অতিথি সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি পুরস্কার বিতরণের সময় খেলোয়াড়দের উদ্দেশে বলেন, তাদের এই অর্জন ভবিষ্যতের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। নারীরা কেবল জাতীয় নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও বাংলাদেশের সম্মান বৃদ্ধি করবে।
তিনি সমাপনী বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেন, খেলাধুলার মাধ্যমে শুধু স্বাস্থ্য ভালো রাখা বা শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা যায় না, বরং এটি একধরনের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায়। মেয়েদের অংশগ্রহণ সমাজে ইতিবাচক বার্তা ছড়ায় এবং নতুন প্রজন্মকে প্রেরণা জোগায়।
প্রতিযোগিতা শেষে স্টেডিয়ামে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। খেলোয়াড়, কোচ ও দর্শকদের মধ্যে ছিল উচ্ছ্বাস ও উদ্দীপনা। নারী খেলোয়াড়দের অংশগ্রহণে জাতীয় হ্যান্ডবল প্রতিযোগিতা নারীর সাহস, সম্ভাবনা ও অদম্য ইচ্ছাশক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
repoter




