
ছবি: -সংগৃহীত ছবি
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির আবেদন করেছে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের সিনিয়র মহানগর স্পেশাল জজ (ভারপ্রাপ্ত) আবদুর রহমানের আদালতে এই আবেদন দাখিল করা হয়।
দুদকের পক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোকাররম হোসাইন জানিয়েছেন, একাধিক মামলার আসামি সাইফুজ্জামান ও রুকমিলা জামানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রেপ্তারি প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য রেড নোটিশ জারির আবেদন করা হয়েছে। আদালত এ বিষয়ে শুনানির জন্য আগামী রবিবার দিন নির্ধারণ করেছেন।
দুদক সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ ওঠে। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর এই অনুসন্ধান আরও গতি পায়। দুদকের উপ-পরিচালক মশিউর রহমানকে এ বিষয়ে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এ বছরের ১৭ এপ্রিল তাদের বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলার পরপরই আদালত তাদের বিপুল সম্পদ জব্দের নির্দেশ দেন। আদালতের নথি অনুযায়ী, সাইফুজ্জামান ও রুকমিলা জামানের নামে বিদেশে অগণিত স্থাবর সম্পদের খোঁজ মিলেছে। যুক্তরাজ্যে ৩৪৩টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২২৮টি এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৯টি সম্পত্তি জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দেশেও তাদের সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে বলে দুদক জানিয়েছে।
শুধু বিদেশে নয়, দেশে থাকা সম্পদও আদালতের নির্দেশে জব্দ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৫ মার্চ তাদের নামে থাকা ৩৯টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এসব হিসাবে ৫ কোটি ২৬ লাখ টাকার বেশি জমা রয়েছে। একই সঙ্গে তাদের নামে থাকা ১০২ কোটি টাকার শেয়ার ও ৯৫৭ বিঘা জমিও আদালতের নির্দেশে জব্দ করা হয়েছে।
এর আগে, ২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর আদালত সাইফুজ্জামান ও তার স্ত্রীকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তবে এরপর থেকেই তারা আত্মগোপনে চলে যান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, এত বিপুল পরিমাণ সম্পদের উৎস সম্পর্কে সাইফুজ্জামান ও রুকমিলা জামান কোনো সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। ফলে তাদের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, জালিয়াতি ও দুর্নীতির অভিযোগ আরও শক্তভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
আদালতের একাধিক আদেশে ইতোমধ্যেই তাদের সম্পদ জব্দ হলেও তারা এখনও গ্রেপ্তার এড়াতে সক্ষম হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চাইতে বাধ্য হয়েছে দুদক। ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হলে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা এবং গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।
দুদকের আইনজীবীরা আশা করছেন, আদালতের অনুমোদন মিললেই ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করবে। এতে সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও রুকমিলা জামানকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের আওতায় আনা সহজ হবে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে প্রভাবশালী পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাইফুজ্জামান চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় ছিলেন। তার স্ত্রী রুকমিলা জামানকেও দুর্নীতির সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত করেছে দুদক। এখন দেখার বিষয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের গ্রেপ্তারি প্রক্রিয়ার মুখে এই দম্পতিকে কত দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা যায়।
repoter