ঢাকা,  শুক্রবার
১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ , ০৩:৪১ মিনিট

Donik Barta

শিরোনাম:

* জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ: ওবায়দুল কাদেরসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল * গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান হাদির অবস্থা আশঙ্কাজনক, দেশে–বিদেশে উদ্বেগ * ঢাকা–দিল্লি সম্পর্কে নতুন করে উত্তেজনা, আজ চালু থাকছে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্র * ৬৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ জব্দ, বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে গতি আনছে সরকার * যুক্তরাষ্ট্রের ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ ফিরিয়ে আনছেন ট্রাম্প, সমালোচনার কেন্দ্রে ভেনেজুয়েলা অভিযান * পাবনার বেড়ায় স্পিডবোটে এসে বাজারে ডাকাতি, ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত * যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভেনেজুয়েলা অভিযান: মাদুরো সরকারের ওপর চাপ বাড়ছে * ট্রাম্পের ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনা: ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে নতুন জটিলতা * গুম ও মানবতাবিরোধী অভিযোগে ১৩ সেনা কর্মকর্তা ট্রাইব্যুনালে * বিএনপির ৪০টির বেশি আসনে মনোনয়নসংক্রান্ত অসন্তোষ, কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ব্যস্ত সমাধান খুঁজতে

আন্দোলনের মুখে পিছু হটলো ইউআইইউ প্রশাসন, শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার

repoter

প্রকাশিত: ০৯:১১:১৪অপরাহ্ন , ২১ জুন ২০২৫

আপডেট: ০৯:১১:১৪অপরাহ্ন , ২১ জুন ২০২৫

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে আসার সুযোগ পেলেন বহিষ্কৃতরা, দাবি বাস্তবায়নে আশ্বাস দিলো ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রশাসন।

বেসরকারি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) সম্প্রতি বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নেওয়া সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। শনিবার রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্থায়ীভাবে ও সেমিস্টার ভিত্তিতে বহিষ্কৃত সকল শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. জুলফিকুর রহমান জানান, শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও চলমান সংকট নিরসনের কথা বিবেচনা করেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ শাখার পরিচালক আবু সা-দাত মো. মুনতাসিরবিল্লা জানান, প্রশাসনিক বৈঠকে বিষয়টি গভীরভাবে পর্যালোচনা করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যেসব শিক্ষার্থী স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত ছিলেন, তারা চলতি স্প্রিং সেমিস্টার থেকেই পুনরায় ক্লাসে অংশ নিতে পারবেন। আর যাদের দুই সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছিল, তারা আগামী ফল সেমিস্টার থেকে পুনরায় শিক্ষাজীবনে ফিরতে পারবেন।

এর আগে শনিবার সকাল ৮টার দিকে রাজধানীর নতুনবাজার এলাকায় ইউআইইউ শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে। শিক্ষার্থীরা মূলত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ‘অন্যায়’ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও ব্যবস্থাপনার সংস্কারের দাবি জানান।

অবরোধের ফলে নদ্দা থেকে বাড্ডাগামী সড়ক বন্ধ হয়ে পড়ে, যার ফলে সাধারণ যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। কর্মস্থলমুখী অনেক মানুষ যানজটে আটকে পড়েন এবং গণপরিবহন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে।

বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করেন। তাদের মধ্যে প্রধান ছিল— ‘অন্যায়ভাবে’ বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের নিঃশর্তভাবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা এবং তাদের জন্য যথাযথ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে, বহিষ্কারের পেছনে যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন— সেই শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।

তারা আরও দাবি করেন, ইউআইইউতে দীর্ঘদিন ধরে চলা নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার বিরুদ্ধে যে সংস্কারের কথা শিক্ষার্থীরা বারবার বলে আসছেন, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সার্বিক পরিবেশ উন্নয়নে একটি স্বাধীন সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। শেষত, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর আরোপিত ১৫ শতাংশ কর বাতিলের বিষয়টিও তাদের দাবির তালিকায় ছিল।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে সব দাবি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি, তবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে অনেকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছুটা হলেও আস্থা ফিরেছে, তবে তারা মনে করছেন, শুধু বহিষ্কার প্রত্যাহার নয়, প্রশাসনিক সংস্কার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা না হলে সংকটের সমাধান হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, গত কয়েক মাস ধরে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশাসনের কিছু সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তোষ বাড়ছিল। বহিষ্কারের ঘটনায় সেই অসন্তোষ এক বিস্ফোরক পর্যায়ে পৌঁছে যায় এবং প্রশাসন বাধ্য হয় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের চাপে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে।

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। বহু সাবেক শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা শিক্ষার্থীদের দাবিকে ন্যায্য বলে উল্লেখ করে প্রশাসনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানান।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে একটি সুশাসনের মডেল হিসেবে পরিচিত ইউআইইউ’র এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে কতটা কার্যকর হতে পারে। তবে একইসঙ্গে এটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের জন্য একটি সতর্কবার্তাও— শিক্ষার্থীদের স্বার্থ উপেক্ষা করলে বা তাদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ না করলে এর ফলাফল হতে পারে জটিল।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, বাকি দাবিগুলোর বিষয়ে প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেবে। শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, বহিষ্কারের পেছনে থাকা ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে কিনা এবং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ‘অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার’ সংস্কার কবে নাগাদ শুরু হবে, তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।

ইউআইইউ প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে আপাতত আন্দোলন কিছুটা স্থিমিত হলেও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বাকি দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে তারা আবারও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। এজন্য তারা প্রশাসনের কাছে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রতিশ্রুতি ও কার্যকর পদক্ষেপ চাচ্ছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক এবং প্রশাসনের উচিত এই মুহূর্তে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে পৌঁছানো। তিনি বলেন, “শিক্ষাঙ্গনে কোনোভাবেই দমন-পীড়নের জায়গা নেই। সংলাপ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।”

ঘটনাবলি পর্যালোচনায় বোঝা যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন প্রশাসনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে বাধ্য করেছে। এটি দেশের বেসরকারি উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে— যেখানে শিক্ষার্থীরাও অংশীদার, শুধু পাঠগ্রহীতা নয়।

এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন করে আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই সুযোগ কীভাবে কাজে লাগানো হয়— একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথে।

repoter