
ছবি: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি - ছবি : রয়টার্স
ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) অভিযোগ করেছে, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট একটি ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ভারতকে টার্গেট করছে। বিজেপির দাবি, এই ষড়যন্ত্রে ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেস এবং তদন্তকারী সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলে কাজ করছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিজেপি অভিযোগ তুলেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে অস্থিতিশীল করার জন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। বিজেপি আরও বলেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে থাকা দলকে দুর্বল করার জন্য বিরোধী কংগ্রেস পার্টি এবং আন্তর্জাতিক সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ওসিসিআরপি (অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট) নামের একটি সাংবাদিকতা সংগঠনের প্রতিবেদনে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসে, যা কংগ্রেস দলকে আরও সক্রিয় করে তোলে। বিজেপি দাবি করেছে, এই প্রতিবেদনের পেছনে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের মদত রয়েছে।
বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়, এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে রাহুল গান্ধির নেতৃত্বে কংগ্রেস আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে একতরফা প্রচারণা চালিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে লক্ষ্য করে ভারতকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সম্প্রতি আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ তোলে, যেখানে বলা হয়, তারা ভারতীয় কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে বড় প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছে। তবে আদানি গ্রুপ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং একে ‘ভিত্তিহীন’ বলে অভিহিত করেছে।
ওসিসিআরপি’র এক প্রতিবেদনে পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহারের অভিযোগ উঠে আসে। এই স্পাইওয়্যার দিয়ে সমালোচকদের ওপর নজরদারি চালানো হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে মোদি সরকার এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
বিজেপি আরও অভিযোগ করেছে, রাহুল গান্ধি, ওসিসিআরপি এবং মার্কিন ধনকুবের জর্জ সোরোস যৌথভাবে ভারতের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। ফরাসি একটি সংবাদমাধ্যমের বরাতে বিজেপি বলেছে, ওসিসিআরপি মার্কিন অর্থায়নে পরিচালিত হয় এবং এর লক্ষ্য প্রধানমন্ত্রী মোদিকে দুর্বল করা।
বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ওসিসিআরপি’র মাধ্যমে গভীর ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, মার্কিন সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত ওসিসিআরপি একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে।
ওসিসিআরপি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা একটি স্বাধীন মিডিয়া আউটলেট এবং কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নেই। তারা বলেছে, মার্কিন সরকার কিছু তহবিল দিলেও এর মাধ্যমে তাদের রিপোর্টিং প্রক্রিয়ায় কোনো হস্তক্ষেপ করা হয় না।
এদিকে বিরোধী দল কংগ্রেস আদানি ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে। বিরোধীরা বলেছে, মোদি সরকার আদানি গ্রুপকে সুরক্ষা দিয়ে আসছে। এই বিতর্কের জেরে গত সপ্তাহে ভারতের সংসদের একাধিক অধিবেশন স্থগিত করা হয়।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে বিজেপির এই অভিযোগ ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি নয়াদিল্লি-ওয়াশিংটন সম্পর্ককে আরও উত্তপ্ত করতে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
বিজেপি বলেছে, মোদিকে দুর্বল করার এই ষড়যন্ত্র ভারতের সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত। দলটি আরও দাবি করেছে, দেশের জনগণ এই ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সচেতন এবং তা প্রতিহত করবে।
repoter