ছবি: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতন জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং সাবেক ইসকন নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির পর বাংলাদেশ গভীর হতাশা প্রকাশ করেছে। মঙ্গলবার ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির পর, রাতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক জবাবী বিবৃতি প্রদান করেছে। সরকারের মতে, ভারতের বিবৃতিতে বাংলাদেশে ঘটমান একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ভুল এবং বিকৃত তথ্য ছড়ানো হয়েছে, যা দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের পরিপন্থী।
বিবৃতিতে বলা হয়, “ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে বিবৃতি দিয়েছে, তা আমাদের সরকারের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অত্যন্ত হতাশা ও গভীর দুঃখের সঙ্গে আমরা জানাচ্ছি যে, চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে নির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করার পর কিছু মহল বিকৃত তথ্য ছড়াচ্ছে। এই ধরনের ভিত্তিহীন বিবৃতি শুধুমাত্র ভুল তথ্য ছড়ানোর উদ্দেশ্যেই নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও বোঝাপড়ার প্রতি একটি বড় আঘাত।”
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও উল্লেখ করেছে যে, ভারতের বিবৃতি বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে বিদ্যমান ধর্মীয় সম্প্রীতি এবং সরকারের অসাম্প্রদায়িক নীতির প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। "আমাদের দেশে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান রয়েছে, এবং সরকার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ," বিবৃতিতে বলা হয়।
এছাড়া, বাংলাদেশ সরকারের দাবি যে, "বর্তমানে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে বিচারহীন সংস্কৃতি ছিল, তা বন্ধ করতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ," তা ভারতের বিবৃতিতে উপেক্ষিত হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, “প্রত্যেক বাংলাদেশি তার ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠা, বজায় রাখা বা পালন করার অধিকার রাখে, এবং রাষ্ট্র সেই অধিকার রক্ষায় দায়িত্ববদ্ধ। দেশের নাগরিকদের বিশেষ করে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সরকারের দায়িত্ব।”
গত মাসে দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদাহরণ তুলে ধরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উল্লেখ করেছে যে, সরকার সকল ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা ও তাদের অধিকার রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর।
চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং সরকার এর কাজে হস্তক্ষেপ করে না। তারা আরও উল্লেখ করেছে, “চিন্ময় দাসের বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন, এবং সরকার দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
এদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ষষ্ঠ আদালত চিন্ময় দাসের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
এই মামলার পটভূমিতে, গত কয়েকদিনে চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার নিয়ে দেশব্যাপী উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিভিন্ন সংগঠন বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে এবং সরকারের কাছে তার মুক্তি দাবি করেছে।
বাংলাদেশের সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শক্তিশালী করেছে এবং ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “চট্টগ্রামে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে সরকার গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে যাতে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় থাকে।”
চিন্ময় দাসের গ্রেপ্তার এবং subsequent জামিন শুনানি নিয়ে পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত, এবং দুই দেশের মধ্যে এই বিতর্ক ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সম্পর্কের উপর কী প্রভাব ফেলবে তা দেখতে এখনও অপেক্ষা করতে হবে।
repoter