ছবি: আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল অভিযোগ করেছেন, একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের মাধ্যমে তার ব্যক্তিগত চরিত্র হনন ও দেশের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা নষ্টের চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, এই অপপ্রচার একটি ভারতীয় পরিকল্পনার অংশ, যা বাংলাদেশের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী ইউটিউবার ইলিয়াস হোসেন তার ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। ভিডিওটির শিরোনাম ছিল, "পুলিশ, আনসারের সমন্বয়ে গঠিত বাহিনী নিয়ে সশস্ত্র গেরিলা আক্রমণের পরিকল্পনা"। এতে দাবি করা হয়, আসিফ নজরুল গত ৩-৪ আগস্ট ক্যান্টনমেন্টে ভারতের এজেন্টদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।
তবে এই অভিযোগ ভিত্তিহীন ও আজগুবি বলে দাবি করেছেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল। শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই অভিযোগের প্রতিবাদ জানান। সভাটির শিরোনাম ছিল "স্মৃতির মিনার: গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪"।
“মিথ্যা অপপ্রচার অগ্রহণযোগ্য”
আলোচনা সভায় অধ্যাপক নজরুল বলেন, “একটি ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে যে আমি আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে আর্মি অফিসার ও ভারতের দালালদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এই ধরনের মিথ্যাচার কেন করা হচ্ছে? এর পেছনে উদ্দেশ্য কী?”
তিনি বলেন, “৩ আগস্ট রাতে আমি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মাহবুব মোর্শেদসহ অন্যান্যদের সঙ্গে সমাবেশ করেছিলাম। রাত ৯টা পর্যন্ত সেখানে অবস্থানের পর ঢাবির ফুলার রোডের ১৯ নম্বর ভবনে অধ্যাপক মোস্তফা মামুনের বাসায় ছিলাম। পরের দিন ৪ আগস্টও আমি বিভিন্ন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের একটি প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলাম। যেখানে আমি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলি। এসব প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আমাকে এই মিথ্যা অভিযোগে জড়ানো হচ্ছে।”
“ভারতীয় পরিকল্পনার অংশ”
অধ্যাপক নজরুল দাবি করেন, এই অপপ্রচার শুধু তার বিরুদ্ধে নয়; বরং দেশের রাজনীতি ও সরকার ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করার একটি বড় ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, “আমাদের প্রতিবেশী দেশের একটি পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। যেখানে বলা হয়, শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ দেশ চালাতে পারবে না। তিনি চলে গেলে দেশ উগ্রবাদীদের খপ্পরে পড়বে। এই ভারতীয় স্ক্রিপ্ট বাস্তবায়নে কিছু মানুষ এখন কাজ করছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই পরিকল্পনা শুধু শেখ হাসিনাকে অপরিহার্য করার জন্য নয়, বরং দেশের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে একটি প্রভাবশালী দেশকে সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা।”
“আমাদের মূল কাজ গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা”
দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “আমাদের রাষ্ট্র গঠনের প্রধান কাজ হচ্ছে গণহত্যার বিচার, আহত ও নিহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু বাংলাদেশে গত ১৭ বছর ধরে মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। তরুণ প্রজন্ম ভোট দিতে ভুলে গেছে। এটি একটি বড় সংকট।”
আলোচকদের মতামত
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকা আসিফ নজরুল ছাড়াও বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, লেখক ও সম্পাদক রাখাল রাহা, কবি ও অ্যাক্টিভিস্ট ফেরদৌস আরা রুমী, বাসস পরিচালনা বোর্ডের সদস্য আনোয়ার আলদীন ও নূরে আলম মাসুদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান।
আলোচকরা বলেন, দেশে বিভাজন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। তারা দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জনগণকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান।
“মিথ্যার সীমা থাকা উচিত”
ইলিয়াস হোসেনের উদ্দেশ্যে আসিফ নজরুল বলেন, “আজগুবিরও একটা সীমা থাকা উচিত। মিথ্যা তথ্য দিয়ে শুধু আমাকে নয়, দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সত্যের কাছাকাছি থাকলে মানুষ প্রতিবাদ করবে। কিন্তু এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
অনুষ্ঠান শেষে অধ্যাপক নজরুল বলেন, “আমাদের সবাইকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। কারণ, দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য অনেক মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। সেই ত্যাগকে সম্মান জানিয়ে আমাদের রাষ্ট্র গঠনে কাজ করতে হবে।”
repoter