ছবি: ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, ভারতের কিছু গণমাধ্যম এবং সংশ্লিষ্ট মিডিয়া সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপকভাবে ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে এবং ভারতীয় মিডিয়া এ প্রচারণার একটি বড় অংশে রয়েছে। এই অপপ্রচার শুধু ভারতীয় গণমাধ্যমেই সীমাবদ্ধ নয়, এর পাশাপাশি অনেক স্থানীয় মিডিয়া ভারতীয় মিডিয়ার ভিত্তি নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দিচ্ছে।
সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক কূটনীতিক ব্রিফিং শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব মন্তব্য করেন। ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মানি, জাপান, চীন, কানাডা, সৌদি আরব, ইরান, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তানসহ একাধিক দেশের কূটনীতিক ও বাংলাদেশে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, “এটা মেনে নেওয়া যায় না যে, আমাদের দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। তবে, যদি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটে থাকে, তা খুবই কম এবং এই ধরনের ঘটনা সব সরকারের সময়েই ঘটেছে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের কাজ হচ্ছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা এবং অন্তর্বর্তী সরকার সেটা করছে। তবে, এর বাইরেও দেশ ও বিদেশে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে।”
তৌহিদ হোসেন সরকার এবং জনগণের উদ্দেশে জানান, সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে পুরোপুরি বদ্ধপরিকর এবং কোনো প্রকার সাম্প্রদায়িক অপতৎপরতা বরদাশত করবে না। তিনি বলেন, “বর্তমান সরকার হিন্দু-মুসলিম কিংবা অন্য কোনো ধর্মীয় গোষ্ঠীকে ভেদ করতে চায় না। কোনো বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে আমরা অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
তিনি এই সময় আরও জানান, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যে অপপ্রচার চলছে তা শুধু ভারতের গণমাধ্যমের নয়, কিছু অভ্যন্তরীণ মিডিয়াও এই অপতথ্য প্রচারে জড়িত। এর ফলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে এবং বিদেশি কূটনীতিকদেরও বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
পূর্ববর্তী সরকারের আমলেও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছিল, কিন্তু তৌহিদ হোসেন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে এসব ঘটনা সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বড় ছবি তুলে ধরে না। তিনি বলেন, “আমরা কোনোভাবেই এই ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতে দেবো না, যা আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িক অপতৎপরতার সৃষ্টি করবে।”
বাংলাদেশের বর্তমান সরকার সব ধরনের অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা মোকাবিলা করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং দেশের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তৌহিদ হোসেন বলেন, “সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোনো স্থান নেই বাংলাদেশে, এবং যদি কেউ এর চেষ্টা করে, তারা কঠোরভাবে আইনানুগ শাস্তির মুখোমুখি হবে।”
তিনি আরও বলেন, সরকার দেশের ভিতরে এবং বাইরে এই মিথ্যা তথ্যের ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে এবং এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রস্তুত। “আমরা কোনো ভুল তথ্য প্রচারের সুযোগ দেবো না এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেবো।”
অতএব, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশবাসী এবং বিদেশি কূটনীতিকদের জানিয়ে দিয়েছেন যে বাংলাদেশের সরকার সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের বিভ্রান্তিকর প্রচার মোকাবিলা করবে।
repoter