
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই-জানুয়ারি) ভারতে ১.১১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, এই অঙ্ক গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪.৬৬ শতাংশ বেশি। চলমান প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছর শেষে রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর আগে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ভারতে পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ২.১৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল, যা বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে রপ্তানির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ রেকর্ড। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেই প্রবৃদ্ধি কমে আসায় রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ১.৫৭ বিলিয়ন ডলারে। এবার আবারও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ভারতে রপ্তানি হওয়া মোট পণ্যের ৪২ কোটি ৭৬ লাখ ডলার এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ বেশি। পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি থেকে এসেছে ১১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, প্লাস্টিক পণ্য থেকে ৪ কোটি ২২ লাখ ডলার এবং সুতাজাত দ্রব্য রপ্তানি থেকে এসেছে ১ কোটি ৯৪ লাখ ডলার।
গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ে ভারতে ৯৬ কোটি ৯৩ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যিক সম্পর্কে চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কোনো প্রভাব পড়েনি বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বরং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি এখনো বিশাল। বাংলাদেশ ভারতের তুলনায় অনেক কম রপ্তানি করলেও সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধি এই ব্যবধান কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরে সেই আয় দ্বিগুণের বেশি বেড়ে ২.১৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। ২০২০-২১ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১.২৮ বিলিয়ন ডলার, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১.২৫ বিলিয়ন ডলার এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা নেমে আসে ১.০৯ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ মূলত তৈরি পোশাক, কাঁচা পাট ও পাটজাত পণ্য, সুতা, প্লাস্টিক পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য ভারতে রপ্তানি করে থাকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ ৫৫ কোটি ডলার, পাট ও পাটজাত পণ্য থেকে ২২ কোটি ডলার এবং চামড়া খাত থেকে ১১ কোটি ডলার আয় করেছিল।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে কাঁচা মরিচ, পেঁয়াজ, আলু, চাল, ডালসহ প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, বিশেষ করে তুলা ও সুতা।
সাত মাসের (জুলাই-জানুয়ারি) আমদানির তথ্য এখনো পাওয়া না গেলেও এ সময়ে আমদানির প্রবাহ স্বাভাবিক ছিল বলে জানা গেছে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, ভারতের বাজারে তৈরি হওয়া এই ইতিবাচক বাণিজ্যিক পরিবেশ যেন রাজনৈতিক কারণে বিঘ্নিত না হয়।
নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, "ভারতে আমাদের পোশাক রপ্তানির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এক সময় এই বাজারে আমাদের রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছিল, তবে পরে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল। এখন আবার রপ্তানি বাড়ছে, যা ধরে রাখা জরুরি। এজন্য কূটনৈতিক তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে এবং যে সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তার সম্মানজনক সমাধান করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "ভারতে রপ্তানির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, দেশটি বাংলাদেশের কাছাকাছি হওয়ায় পরিবহন খরচ অনেক কম হয়। স্থলবন্দর দিয়েই সব পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব। এ কারণে ভারতে রপ্তানি যত বাড়বে, বাংলাদেশের জন্য তত ভালো হবে।"
repoter