
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
রাজশাহীতে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ যাত্রীদের বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের মধ্যে রেলওয়ে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ধর্মঘট প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি জানান, রানিং স্টাফদের দাবিগুলো অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনায় রয়েছে এবং বিষয়টি দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, “দাবিগুলো ন্যায্য হতে পারে, তবে ট্রেন বন্ধ করে যাত্রীদের জিম্মি করা অত্যন্ত দুঃখজনক।” তিনি আরও বলেন, “এটি সমাধানের এখতিয়ার কেবল রেল মন্ত্রণালয়ের নয়, অর্থ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আশা করছি, শিগগিরই একটি সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।”
গত সোমবার রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া ধর্মঘটের কারণে দেশব্যাপী ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে পড়েছে। এর ফলে বিভিন্ন রুটে ভ্রমণের জন্য স্টেশনে আসা যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে এক নিস্তব্ধতার চিত্র দেখা যায়। টিকিট কাউন্টারগুলো ফাঁকা ছিল এবং প্ল্যাটফর্মে যাত্রীদের হতাশা ছিল স্পষ্ট। তবে অনেক যাত্রীই এই ধর্মঘট সম্পর্কে আগে থেকে কিছু জানতেন না। ফলে তারা স্টেশনে এসে আটকা পড়েছেন।
ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, রাজশাহী ও কক্সবাজারের মতো বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য আগত যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। পরিবারের সঙ্গে ভ্রমণে আসা অনেকেই শীতের সকালে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না পেয়ে স্টেশনে বসে থাকছেন।
একজন যাত্রী জানান, “আমরা জানতাম না ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে। এখন এখানে আটকে আছি এবং অন্য কোনো উপায়ও নেই।”
অন্যদিকে, রাজশাহীতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে রেলের রানিং স্টাফরা সোমবার মধ্যরাত থেকে কোনো ট্রেন ছাড়েননি। এতে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে শত শত যাত্রী দুর্ভোগে পড়েন। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা স্টেশনে ভাঙচুর চালান। যাত্রীদের বসার জন্য রাখা চেয়ারগুলো ভাঙা হয় এবং স্টেশনের ভেতরের বিভিন্ন রুমের দরজায় ধাক্কাধাক্কি করা হয়।
রাজশাহী স্টেশনে তিতুমীর এক্সপ্রেস ট্রেনটি মঙ্গলবার সকাল ৬টা ২০ মিনিটে চিলাহাটির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে ট্রেন না ছাড়ায় বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের অভিযোগ, ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও অনলাইনে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এ ধরনের হঠাৎ ধর্মঘটের কারণে অধিকাংশ যাত্রী বিষয়টি জানতেন না।
যাত্রীরা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “যদি ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে, তবে টিকিট কেন বিক্রি করা হচ্ছে? আমরা কোনো প্রস্তুতি ছাড়াই আটকা পড়েছি।”
রেলওয়ে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান যাত্রীদের দুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে বিষয়টি দ্রুত সমাধানের অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, “যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘব করতে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা উচিত। আলোচনার মাধ্যমে একটি কার্যকর সমাধান বের করতে হবে।”
অন্যদিকে, রেলওয়ের বিভিন্ন সংগঠন এবং রানিং স্টাফদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে তাদের দাবিগুলো দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা কর্মবিরতিতে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করেছে যে চলমান আলোচনা থেকে একটি সমাধান বের করা সম্ভব হবে এবং শিগগিরই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হবে। তবে ততক্ষণ পর্যন্ত যাত্রীদের দুর্ভোগ চলতে থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
repoter