
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাজ্যের অর্থ ও নগরবিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিককে সিটি মিনিস্টারের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমস। সম্প্রতি টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। এ পরিস্থিতিতে দায়িত্বে থাকার উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এই দাবি জানানো হয়েছে।
রুপার্ট মারডকের মালিকানাধীন সংবাদমাধ্যমটির সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, টিউলিপের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত ঘটনা প্রমাণ করে, তার বর্তমান পদে থাকা উচিত নয়। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে এই পদে টিউলিপকে মনোনীত করার জন্য সমালোচনা করা হয়েছে।
সম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়েছে, টিউলিপকে সিটি মিনিস্টার পদে বসানোর বিষয়টি শুরু থেকেই স্বচ্ছ ছিল না। এ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তার আগ্রহ বা দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। স্টারমারের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ পদে তার ব্যক্তিগত সম্পর্কের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত অভিযোগ অনুযায়ী, টিউলিপ সিদ্দিক বিনামূল্যে একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করছেন, যা লন্ডনে আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ একজন ব্যবসায়ীর দেওয়া উপহার বলে জানা গেছে। আরও অভিযোগ ওঠে, টিউলিপ বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে দুর্নীতির সঙ্গে কোনোভাবে জড়িত থাকতে পারেন।
দ্য টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, টিউলিপের সম্পত্তি এবং তার সঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে টিউলিপের অর্থনৈতিক সংযোগের বিষয়ে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বিস্তারিত খতিয়ে দেখছেন।
একই সঙ্গে টিউলিপের লুকানো সম্পত্তি সম্পর্কেও প্রশ্ন উঠেছে। ২০২৪ সালের আগস্টে তার ফ্ল্যাট থেকে ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে তথ্য গোপন করা নিয়ে সংসদীয় তদন্ত শুরু হয়। পরে টিউলিপ প্রক্রিয়াগত ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। তবে, তদন্তে তিনি পার পেয়ে যান।
সম্প্রতি আরও জানা যায়, টিউলিপের মা উত্তর লন্ডনের একটি বাড়িতে বাস করেন, যার মালিক একজন শিল্পগোষ্ঠীর কর্মকর্তা। ওই কর্মকর্তার বাবা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। এ ছাড়াও, টিউলিপের বোন আজমিনার মালিকানাধীন আরও একটি ফ্ল্যাটে তার বসবাসের তথ্য উঠে এসেছে।
সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, টিউলিপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তাধীন থাকাকালে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা উচিত। তদন্তে যদি তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন, তবে তাকে আবার দায়িত্বে ফিরিয়ে আনার সুযোগ থাকবে।
তবে টিউলিপ সিদ্দিক এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, তার সম্পত্তির সঙ্গে তার খালা শেখ হাসিনার কোনো যোগসূত্র নেই।
দ্য টাইমসের মতে, টিউলিপ তার স্বজনদের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে তিনি যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে নৈতিক এবং প্রশাসনিক তদন্তের মুখে পড়েছেন। সংবাদমাধ্যমটি আরও বলছে, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিরোধীরা টিউলিপকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করতে পারেন, যা তার পক্ষে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে।
সিটি মিনিস্টার হিসেবে টিউলিপকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত কতটা উপযুক্ত ছিল, তা নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। যুক্তরাজ্যের আর্থিক সেবাখাতের উন্নয়ন এবং লন্ডনের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে স্থান ধরে রাখার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার তেমন কোনো ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।
দুর্নীতি, রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার মতো অভিযোগ নিয়ে চাপের মুখে থাকা টিউলিপ সিদ্দিকের ভবিষ্যৎ কী হতে যাচ্ছে, তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে।
repoter