
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ে পিএইচডি গবেষক ও আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ তীব্র শীতের মধ্যেও দেশে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এ বিষয়ে সতর্ক করেন।
পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশে রেকর্ড ব্রেকিং শীতকালীন বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, ২০২২ সালের ৪ ও ৫ ফেব্রুয়ারিতে যে রকম রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছিল, একই ধরনের পরিস্থিতি এবছরও তৈরি হতে পারে। তার পূর্বাভাস অনুযায়ী, এই সময়ে বাংলাদেশে শীতকালীন বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও জানান, আগামী ১৮ ও ১৯ ডিসেম্বর দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। একই সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের ওপর দিয়ে একটি শক্তিশালী পশ্চিমা লঘুচাপ অতিক্রম করবে। এই দুই লঘুচাপের সম্মিলিত প্রভাবে ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক শীতকালীন বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, সম্ভাব্য এই ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস শতকরা ৯০ ভাগের বেশি নিশ্চিত। তিনি জানান, সবচেয়ে বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে খুলনা, বরিশাল, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে রাজশাহী, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতে। তুলনামূলকভাবে হালকা বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায়।
তিনি বিশেষ করে কৃষকদের সতর্ক করে বলেন, খুলনা, বরিশাল, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের আলুচাষিদের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ভারি বৃষ্টির কারণে জমিতে পানি জমে যাওয়ায় আলু চাষের ক্ষতি হতে পারে। তিনি পরামর্শ দেন, আজ থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত আলুর জমিতে কৃত্রিম সেচ না দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদেরও অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
মোস্তফা কামাল পলাশের এই পূর্বাভাস দেশের কৃষকদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে। বিশেষত এই সময়ে শীতকালীন বৃষ্টির এমন পূর্বাভাস কৃষির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কৃষকদের জানানো হচ্ছে, তারা যেন সতর্কতা অবলম্বন করে তাদের ফসল রক্ষা করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
এদিকে, আবহাওয়াবিদদের মতে, লঘুচাপ ও পশ্চিমা বায়ুর মিলিত প্রভাবে শীতকালীন বৃষ্টি একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা হলেও এই ধরনের রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত বিরল। বিশেষ করে এই সময়ে দেশের কৃষি ও আবহাওয়া পরিস্থিতির ওপর এটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। কৃষকরা যাতে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেতে পারেন, সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তাদেরও প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ আরও বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বৃষ্টির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হতে পারে। বিশেষ করে বরিশাল, খুলনা এবং চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। পাশাপাশি মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগেও বৃষ্টির তীব্রতা লক্ষ্য করা যেতে পারে।
এছাড়াও রাজশাহী, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের জেলাগুলোতেও বৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। তবে উত্তরাঞ্চলের রংপুর বিভাগে তুলনামূলকভাবে কম বৃষ্টি হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তারাও এই পূর্বাভাসকে গুরুত্বের সাথে পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা বলছেন, বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া লঘুচাপ এবং পশ্চিমা লঘুচাপের মিলিত প্রভাবে এমন ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা অস্বাভাবিক নয়। তবে এই বৃষ্টির পরিমাণ রেকর্ড ব্রেকিং হবে কিনা, তা নির্ভর করবে লঘুচাপের শক্তি ও গতিপথের ওপর।
কৃষকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া পরামর্শ অনুযায়ী, যেসব এলাকায় বৃষ্টির তীব্রতা বেশি হতে পারে, সেসব এলাকায় ফসল রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। বিশেষত আলু চাষিদের জন্য এই বৃষ্টি বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। জমিতে অতিরিক্ত পানি জমে যাওয়ার ফলে আলুর গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই জমি থেকে অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের প্রস্তুতি এখনই শুরু করতে হবে।
এছাড়া, শীতকালীন সবজি চাষিরাও যেন সতর্ক থাকেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, সে বিষয়েও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের জন্য বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণের ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি বলে জানানো হয়েছে।
মোস্তফা কামাল পলাশের পূর্বাভাসকে কেন্দ্র করে দেশের কৃষি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা ও কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, বৃষ্টির সম্ভাব্য প্রভাব কমাতে কৃষকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হবে। পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করার প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরা এখন এই বৃষ্টির পূর্বাভাসের বিষয়ে সচেতন হয়ে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। অনেকেই জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করছেন এবং ফসল রক্ষায় আগাম পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের পূর্বাভাস কৃষকদের আগাম প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করে এবং ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনে।
শেষ পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ কতটুকু হবে এবং এটি কৃষি ও সাধারণ জনজীবনে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, তা নির্ভর করছে আগামী কয়েকদিনের আবহাওয়ার ওপর। তবে পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০ ও ২১ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারি শীতকালীন বৃষ্টি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।
repoter