
ছবি: ছবি: সংগৃহীত
তুরস্কের বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুল এবং আশপাশের এলাকায় পরপর তিনটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে, যার মধ্যে একটি ছিল তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী। এসব কম্পনের কারণে শহরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং বহু মানুষ রাস্তায় নেমে আসে নিরাপত্তার খোঁজে।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলী ইয়েরলিকায়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, মারমারা সাগরের সিলিভ্রি এলাকায় রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ২ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে, যা ইস্তাম্বুলসহ আশপাশের কয়েকটি প্রদেশে স্পষ্টভাবে অনুভূত হয়। তিনি জানান, এখনও পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া না গেলেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ।
ভূমিকম্পটি ছিল মারমারা সাগরের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত সিলিভ্রিকে কেন্দ্র করে। এটি ছাড়াও আরও দুটি ভূমিকম্প কয়েক মিনিটের ব্যবধানে অনুভূত হয়। প্রথম ভূমিকম্পটি ছিল ৩ দশমিক ৯ মাত্রার এবং তৃতীয়টি ছিল ৪ দশমিক ৪ মাত্রার। সবক’টি কম্পন ইস্তাম্বুল ও তার আশপাশের এলাকায় অনুভূত হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
তুরস্কের সরকারি দুর্যোগ সংস্থা জানায়, ভূমিকম্পগুলোর অবস্থান ইস্তাম্বুলের নিকটবর্তী এলাকা এবং মারমারা সাগরের উপকূলে হওয়ায় জনজীবনে তীব্র প্রভাব পড়ে। ইস্তাম্বুলে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বসবাস করে, ফলে কম্পনের মাত্রা এবং বারবার কম্পনের কারণে অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম ও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, ভূমিকম্পের সময় অনেক ভবন কেঁপে ওঠে এবং কিছু জায়গায় হালকা ফাটল দেখা যায়। আতঙ্কিত লোকজন ঘর থেকে ছুটে বাইরে বেরিয়ে আসে। স্কুল, হাসপাতাল এবং অন্যান্য জনবহুল প্রতিষ্ঠানেও সাময়িক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তবে এখন পর্যন্ত বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
এর আগেও ভয়াবহ ভূমিকম্পের অভিজ্ঞতা রয়েছে তুরস্কের। ২০২৩ সালে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এবং সিরিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায় ৭ দশমিক ৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। সেই ভয়াবহ দুর্যোগে তুরস্কে প্রায় ৫৩ হাজার ৫০০ জন মানুষ প্রাণ হারায় এবং বহু শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
সম্প্রতিক এই ভূমিকম্পের পর সরকার ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলো পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং নাগরিকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ভূমিকম্প প্রবণ এই অঞ্চলে ভবিষ্যতের জন্য আরও সুনির্দিষ্ট প্রস্তুতি ও সচেতনতা কার্যক্রম চালানোর আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইস্তাম্বুলে একের পর এক ভূমিকম্পের ফলে শহরজুড়ে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা শহরের গভীর দুর্বলতা এবং ভূকম্পন-প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তাকে নতুন করে সামনে এনেছে।
repoter